
বগুড়ার ধুনটে সরকারী অনুমোদনহীন সোনাহাটা দি নিউ ওপেনার কেজি স্কুল নামে একটি ব্যক্তিগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে ধারণকৃত নারী কেলেঙ্কারির আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঘটনার বিষয়ে অবগত থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। গত বুধবার বিনোদন ডটকম” নামক একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছড়িয়ে পড়া ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে স্কুলের ইউনিফর্ম পরিহিত এক ছাত্র এক ছাত্রীকে অশ্লীলতা করতে দেখা যায়। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারের পর স্থানীয়দের নজরে আসলে উদ্বেগ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা এঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ও নজরদারির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করছেন।
জানা গেছে, উপজেলার চাপড়া গ্রামের শাহাদত হোসেন ২০০২ সালে নিমগাছি ইউনিয়নে সোনাহাটা বাজারে দি নিউ ওপেনার কেজি স্কুল গড়ে তোলেন। প্লে থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদানের সরকারী অনুমোদন থাকলেও ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত অবৈধ ভাবে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করিয়ে পাঠদানের অভিযোগ রয়েছে।
নিমগাছি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আল আমিন বলেন, ওই স্কুলের শিক্ষক ও পরিচালানা পরিষদের উদাসীনতার কারনে ইতিপূর্বে নানা অনৈতিক কর্মকান্ড সংঘঠিত হয়েছে। ওই স্কুলে শিক্ষক মিলন রহমান রুমানা খাতুন নামের এক শিক্ষিকার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করে ধরা পড়ে। এলাকাসীর চাপে স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষক শিক্ষিকার বিয়ে করিয়ে দিয়েছেন।
একই ইউনিয়নের যুবদল নেতা মিনারুল ইসলাম জানান, এমপিও ভুক্ত সোনাহাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক শাহ আলম অবৈধ ভাবে দি নিউ ওপেনার কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এমপিও ভুক্ত স্কুলে শিক্ষক হয়ে কিভাবে কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রদল নেতা সিয়াম হোসেন বলেন, কেজি স্কুলের সংঘঠিত নানা অপকর্ম ধামাচাপা দিতে পরিচালক শাহাদত হোসেন স্থানীয় ভাবে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভাবে স্কুল পরিচালনা করে আসছেন। ফলে শিক্ষার নামে গড়ে তোলা কেজি স্কুল এখন কুশিক্ষার আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কেজি স্কুলে ঘটে যাওয়া বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখ জনক বলে দাবী করেছেন।
স্কুলের পরিচালক শাহাদত হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেবের সাথে দেখা করেছি। এবিষয়ে আমি আর কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের এক শিক্ষার্থী জানান, এই সব অনৈতিক কাজেই তো শেষ নয়। প্রতিটি ক্লাসরুমের ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাসের চেয়ে প্রাইভেটে ২ থেকে ৩ গুন বেশি পড়ানো হয়। যদি কেউ অর্থনৈতিক কারণে প্রাইভেট পড়তে না পারে তাহলে তাকে পরীক্ষার খাতায় নম্বর কম দেয়া হয়। সেই ছাত্র ছাত্রীদের ছোট চোখে দেখা হয়। ক্লাসরুমে সামান্য ভুল হলে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুলতানা রাজিয়া বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। সাধারণত কেজি স্কুল গুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে থাকে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, বিষয়টি অবগত আছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।