
বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী হায়েনারা ২শ বছরে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমান সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে গিয়েছিল, হাসিনা মাত্র ১৫ বছরে তার চেয়ে অনেক বেশি সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছেন।
বৃটিশরা ১৭৬৫ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত এই ১৭৩ বছরে সমগ্র উপমহাদেশ থেকে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যমানের সম্পদ পাচার করেছে। শেখ হাসিনা মাত্র ১৫ বছরে শুধু বাংলাদেশ থেকেই ২৩৪ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদ লুটপাট এবং পাচার করেছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী গণমাধ্যমের দীঘদিন ধরে চালানো অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার এই মেগা হরিলুট কারবারের প্রামান্য তথ্য উঠে এসেছে।
সেইসব গণমাধ্যমে প্রকাশিত শেখ হাসিনার লুটপাটের তথ্য বিশ্লেষন করলে দেখা যায়,পৃথিবীর ইতিহাসে কোন দেশে আর কখনোই এতোবড় লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।
১৭৬৫ সাল থেকে বৃটিশদের ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানী এবং ১৮৫৭ সালের পর থেকে ১৯৪৭ সালের ১৩ই আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সম্পাদ লুট করে বৃটেনে পাচার করেছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ই আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের সম্পদ লুটপাট করে আমেরিকা,বৃটেনসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লুট করা হয়েছে। তার মানে ২ লাখ ৩৪ হাজার মার্কিন ডলার। টাকার হিসেবে ২৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই হিসেবে মাথায় জট লাগতে পারে। একটু সহজ করে বললে হিসাবটা হবে ২৮ লাখ কোটি টাকা + ৫৪ হাজার কোটি টাকা+ ৮০০ কোটি টাকা।
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার করে দেশ থেকে বিদেশে পাচার করেছেন।
বৃটিশরা যেখানে বাংলাদেশ-ভারত এবং পাকিস্তান থেকে দীর্ঘ ১৭৩ বছর ধরে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার পাচার করেছিলো, সেখানে হাসিনা শুধু বাংলাদেশ থেকেই মাত্র ১৫ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে।
তুলনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বৃটিশদের হায়েনাদের চেয়ে হাসিনা আড়াই হাজার গুন বেশি খারাপ।
লন্ডনভিত্তিক দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস গত ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে হাসিনার লুটপাটের একটি তথ্যচিত্র প্রচার করেছে। ঐ তথ্যচিত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন: চোখের সামনেই চুরি’। শেখ হাসিনার সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার এবং তা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নিয়ে তথ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়েছে। এই তথ্যচিত্রেই হাসিনার লুটপাটের এই হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।
শেখ হাসিনা নিজে তার পরিবারের ঘনিষ্টদের মাধ্যমে গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লুটপাট চালিয়েছেন। হাসিনার লুটপাটের বেশিরভাগ সম্পদ জমানো আছে বৃটেনে।
ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে যুক্তরাজ্য হয়ে উঠেছে অর্থ পাচারের অন্যতম কেন্দ্র। লন্ডনের আর্থিক খাত ও রিয়েল এস্টেট বাজারকে টার্গেট করে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে।
হাসিনা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ভাতিজী টিউলিপ সিদ্দিকী এবং পরিবারের সদস্যদের ছাড়াও তার ঘনিষ্ট আরো কমপক্ষে ২০ জনের মাধ্যমে এই লুটপাটের অর্থ বিশেরবর বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন।
বিশ্বের ১২টি দেশে তদন্ত হচ্ছে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থপাচারের অভিযোগ। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টাইমসে প্রকাশিত খবরে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
হাসিনার ঘনিষ্ট সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এ লুটপাটের মাধ্যমে একাই যুক্তরাজ্যে ৩০০টির বেশি সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম টেলিগ্রাফ বলেছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করার পর যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামানের সম্পদের সাম্রাজ্যের বিষয়টি সামনে আসে। দেশটিতে তার তিন শতাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এগুলোর মূল্য ১৭ কোটি পাউন্ড। অর্থাৎ ২২ কোটি ৪০ লক্ষ মার্কিন ডলার। এই পরিমানকে টাকার হিসাবে বের করতে গেলে অনেকেরই মাথা ঘুরতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) গত জুনে সাইফুজ্জামানের বেশ কিছু সম্পদ জব্দ করেছে।
সাইফুজ্জামান ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের লন্ডনের সম্পদ জব্দ করেছে এনসিএ।
শুধু লন্ডন নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শেখ হাসিনার লুটপাটের টাকা পাচার করা হয়েছে। হাসিনার লুটপাট করা টাকার কিছু অংশ ফিরিয়ে আনতে পারলেও বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ লাভ করতে পারবে।
……………………………..
এফ শাহজাহান
ফিনান্সিয়াল অ্যানালাইসিস
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
………………………………