৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভারতের কব্জায় বাংলাদেশ : নির্বাচনে আসছে আওয়ামী লীগ

spot_img

চব্বিশের রক্তঝরা বিপ্লবকে মাত্র মাত্র ৯ মাসেই গ্রাস করে ফেলেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (‘র’)। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় গড়ে ওঠা ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্যেও ফাটল ধরাতে পেরেছে।

বিএনপিকে মাঠে নামিয়ে আওয়ামী লীগকে পূনর্বাসনের কাজেও বিষ্ময়কর সফলতা পেয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাটি।

এখন শুধু লগ্ন বুঝে ‘শত্রুনাশের ষষ্ঠীতন্ত্র’ প্রয়োগ করে বাংলাদেশকে পুরাপুরি কব্জায় নেওয়ার বাঁকী কাজগুলো শেষ করতে চায় ভারত।

ভারতের প্রধান মিশন শেখ হাসিনাকে ফিরে এনে আবার ক্ষমতায় বসানো। সেই মিশনের কাজও অনেকটা সফল হয়েছে। শেখ হাসিনা ফিরে এসে আবার ক্ষমতায় বসা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

শেখ হাসিনাকে ফিরে এনে আবার ক্ষমতায় বসানোর ক্ষেত্রে প্রধান দুটি শক্ত বাধা ছিল। প্রথমটা সেনাবাহিনীর আপত্তি আর দ্বিতীয়টা রাষ্ট্রপতি। এখন সেই দুই বাধার প্রথমটি অপসারিত হয়েছে।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান খোলাসা করে দিয়েছেন যে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরে আনার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কোন আপত্তি থাকবে না। আর ড.ইউনূসকে সরাতে পারলে রাষ্ট্রপতিও নির্বিঘ্নে সেই কাজটি করতে পারবেন।

এখন ড.ইউনূসকে যত তাড়াতাড়ি সরানো যাবে, শেখ হাসিনাকেও তত তাড়াতাড়ি ক্ষমতায় ফেরানো যাবে। তাই ড.ইউনূসকে হঠানো এখন ভারতের সবচেয়ে ‘হট এজেন্ডা’।

এখন যে কোন সময় রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা বাতিল করে দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে পারেন।

কিন্তু কৌশলগত কারনে এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে না ‘র’।

আওয়ামী লীগের টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য ‘শত্রুনাশের ষষ্ঠীতন্ত্র’ প্রয়োগ করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চায় ‘র’।

কারণ, এই ‘শত্রুনাশের ষষ্টীতন্ত্রেই’ একদিকে যেমন আওয়ামী লীগের টেকসই প্রত্যাবর্তন এবং অন্যদিকে তেমনি বিএনপিকে চিরতরে নির্বাসনের মন্ত্রযোগ রয়েছে।

হাসিনা এবং আওয়ামী লেগের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশের ‘ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য’ ধ্বংস করা ছাড়া কোন উপায় দেখছে না ভারত। আর বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্য ধ্বংস করার জন্য বিএনপিকে গ্রাস করা ছাড়া অন্য কোন সহজ বিকল্পও নেই ‘র’ এর সামনে।

এখনই হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরালে বিএনপি নিয়ে খেলতে পারবে না ভারত। আর বিএনপিকে নিয়ে খেলতে না পারলে বাংলাদেশের ‘ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য’ বিনষ্ট করা যাবে না।

বাংলাদেশের ‘ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য’ ধ্বংস করতে না পারলে, হাসিনাকে ফেরানোও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না,আর ক্ষতায় বসালেও টেকসই হবে না। তাই ‘শত্রুনাশের ষষ্ঠীতন্ত্র’ই ‘র’ এর কাছে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে নিয়ে খেলতে নামানোই এখন ভারতের মেইন এজেন্ডা। সেই খেলা শুরুও হয়ে গেছে।

বিএনপি এখন সেই খেলার মজাও পেয়ে গেছে। তাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই খেলা থেকে বিএনপিকে আর কেউ সরাতেও পারবে না।

ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথের বাধা কেটে যাওয়াকে বিশাল ‘জয়’ হিসেবে দেখছেন বিএনপির নেতারা। এখন দলটির চূড়ান্ত লক্ষ্য আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আদায়। এ জন্য আগামী জুন মাসে পবিত্র ঈদুল আজহার পর রাজপথে তুমুল আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের অব্যাহতি দাবি করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের অব্যাহতির দাবিও তুলেছে দলটি।

বিএনপিরসংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মাথাভারী উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে শুধু রুটিন ওয়ার্ক পরিচালনার জন্য একটি ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়।

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপি সমর্থন ধরে রাখবেনা বলেও দলটি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেছে।এর অন্যথা হলে বিএনপি সরকারেকে অসহযোগিতা করবে বলেও জানিয়েছে।

স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, ভারতের টোপ গেলা বিএনপিকে নিয়ে এখন গভীর খেলায় মত্ত রয়েছে ‘র’। খেলতে খেলতে গলায় বড়শী আটকানো বিএনপি যখন নিষ্তেজ হয়ে যাবে আর অন্যদিকে জাতীয় ঐক্য তখন বিভক্ত হয়ে পড়বে। ঠিক সেই শুভলগ্নেই হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর নীল নকশা বাস্তবায়নের কাজে হাত দিবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’।

হাসিনাকে ফিরিয়ে ক্ষমতায় বসানোর আগে ‘ষড়ধাপ’ মিশন বাংলাদেশ প্রনয়ন করেছে ‘র’। এটাকে পৌরানিক ভাষায় বলা হচ্ছে ‘শত্রুনাশের ষষ্ঠীতন্ত্র’।‘শত্রুনাশের ষষ্ঠীতন্ত্র’ অনুযায়ী-

প্রথমত: বিএনপিকে রাজপথে নামিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে পদত্যাগে বাধ্য করানো । এই কাজে অবিশ্বাস্য অল্প সময়ে শতভাগ সাফল্যে দ্বারপ্রান্তে এসেছে ‘র’।

দ্বিতীয়ত : আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যকলাপের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করানো। এটার জন্য ভারত বাংলাদেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যাপক কাজ শুরু করেছে। ড. ইউনূসকে সরাতে পারলে এই কাজেও সফলতা অনিবার্য।

তৃতীয়ত: ডিসেম্বরেই নির্বাচন করাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাধ্য করা। এবং
চতূর্থত: ডিসেম্বরের নির্বাচনেই আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহনের পথ করে দেওয়া।
পঞ্চমত: নির্বাচনে বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা। এবং

ষষ্টত : ফাইনাল রাউন্ডে এসে বিএনপিকে দিয়ে আওয়ামী লীগকে পূনর্বাসিত করা এবং আওয়ামী লীগকে দিয়ে বিএনপিকে চিরতরে নির্বাসিত করা।

ফ্যা.সি.স্টে.র রাইফেলের সামনে বুক উঁচিয়ে দাড়িয়ে থাকা শত শত আবু সাঈদ আর মুগ্ধদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা এভাবেই হাতছাড়া হয়ে যাবে।

তবে, যে কোন মূল্যে চব্বিশের রক্তঝরা বিপ্লবে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের ‘ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য’ অটুট রাখতে পারলে এবং ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পারলে; ভারতের ‘শত্রুনাশের শষ্ঠীতন্ত্র’ ব্যর্থ হতে বাধ্য হবে।

এফ শাহজাহান
সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ