
তড়িঘড়ি করে বেরোবিতে আবারো শিক্ষক নিয়োগ মানা হচ্ছে না ইউজিসি নির্দেশ
বেরোবি প্রতিনিধি: শিক্ষার্থীদের অনশনের মধ্যেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইউজিসির নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে আবারও শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড বসিয়েছেন।এদিকে শিক্ষার্থীদের অনশনের মাঝেই উপাচার্য ব্যাস্ত শিক্ষক নিয়োগে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজ রবিবার পূর্ব নির্ধারিত সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক নিয়োগের বোর্ডটি অস্থায়ী ও ইউজিসির অনুমোদন না থাকার সংবাদ জানাজানি হলে উপাচার্য নিজে এই বোর্ড বৃহস্পতিবার রাতে বাতিল করেন।
অন্যদিকে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড আগামীকাল হওয়ার কথা থাকলেও তড়িঘড়ি করে সেই বোর্ড আজকেই ডাকা হয়।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করলেও ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বোর্ড বাতিল না করে একদিন এগিয়ে আনায় এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। উপাচার্যের ঘনিষ্ট প্রক্টর ড.ফেরদৌস রহমানের বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ হওয়াতে উপাচার্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অনেকেই দাবি করছেন। তড়িঘড়ি করে বোর্ড একদিন এগিয়ে দেওয়াতে অনেক প্রার্থীই পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
অন্যদিকে আজ সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের ছাত্র সংসদের দাবিতে পূর্ব ঘোষিত অনশন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, এরই মধ্যে একদিন এগিয়ে শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড করায় হতবাক শিক্ষার্থীরাও।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আগামী ১৮ আগস্ট (সোমবার) ইইই বিভাগের অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষা ছুটির বিপরীতে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। এছাড়াও ২০ আগস্ট( বুধবার) গনিত বিভাগে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড এবং তার পরের দিন ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ও অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
এই সবগুলো অস্থায়ী পদে নিয়োগ দিতে হলে ইউজিসির অনুমতির প্রয়োজন।ইউজিসির সূত্র বলছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরূপ কোন অনুমতি নেওয়া হয় নি।
ইউজিসির সুস্পষ্ট নির্দেশনা অমান্য করে উপাচার্য ড.শওকাত আলী একাই এসকল বোর্ডের তারিখ নির্ধারন করেন বলে জানা গেছে।ইউজিসির সূত্র জানায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য অনুসরনীয় গাইডলাইনসহ একটি পরিপত্র গত ২৮ মে ইউজিসি জারি করেন।
ইউজিসির অর্থ, হিসাব ও বাজেট শাখার পরিচালক রেজাউল করিম হাওলাদার স্বাক্ষরিত সেই পরিপত্রে স্পষ্টভাবে খন্ডকালীন ও শিক্ষা ছুটির বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ না দিতে বলা হয়। আর শিক্ষক নিয়োগ দিলেও সেক্ষেত্রে অবশ্যই মঞ্জুরি কমিশনের পূর্বানুমিত নিতে হবে। অন্যথায় এ খাতে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হবে না বলেও পরিপত্রে সতর্ক করা হয়। এছাড়াও এ উপাচার্যে সময়ে দুইটি বিভাগের অস্থায়ী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও স্থগিত করার পরামর্শ দেয় ইউজিসি। উপাচার্য সেই নির্দেশনাও মানেন নি।
এই পরিপত্র জারি সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইউজিসির পরিপত্রকে উপেক্ষা করে এর পূর্বে সামাজ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষা ছুটির বিপরীতে একজন শিক্ষককে নিয়োগ প্রদানের জন্য বোর্ডের তারিখ নির্ধারন করেন।পরে এটা জানাননি হলে বৃহস্পতিবার রাতে তড়িঘড়ি করে সেই বোর্ড স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে জুলাই আন্দোলনের সামনের সারিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী এস এম আশিকুর রহমান বলেন,
২৪-এর এই বিপ্লব ও রক্তঝরানো গণঅভ্যুত্থানের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষক নিয়োগ কোনভাবেই কাম্য নয়। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতি চরম অবমাননা নয়, বরং দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য একটি বড় হুমকি। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং স্পষ্টভাবে প্রশাসনকে বলতে চাই, ২৪-পরবর্তী সময়েও যদি আপনারা স্বৈরাচারের মতো নিয়োগ বাণিজ্য এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন তবে তা রুখে দিতে আমরা ছাত্রজনতা প্রস্তুত। প্রয়োজনে সব অন্যায় এবং দুর্নীতিকে রুখে দিতে আবারও রাজপথে নামবো, তবুও কোন অন্যায়, দুর্নীতির স্থান এই বেরোবিতে হতে দেবো না।
এ বিষয়ে উপাচার্য ড.শওকাত আলী বলেন,আমি অনেক আগেই সার্কুলার দিয়েছিলাম। পরে ২৮শে মে ইউজিসি পরিপত্র জারি করেছে।এটা বোর্ড গঠন চূড়ান্ত নয়।সিন্ডিকেটে পাসের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।আগামীকালের বোর্ড আজকে হওয়ার কারন জিজ্ঞেস করলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে ফোন কেটে দেন।
যোগাযোগ করা হলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড.তানজিম উদ্দিন বলেন,খন্ডকালীন বা পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলে অবশ্যই অনুমতি নিতে হয়। যা ইউজিসির আইনে বলা আছে। আমি বিষয়টি দেখছি।