৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

স্বাবলম্বী হতে বিদেশে গিয়ে না খেয়ে যুবকের মৃত্যু

spot_img

দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে বাঁচতে ঋণ করে চাকরির খোঁজে সৌদি আরব যান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের যুবক সাফিউল ইসলাম (২৫)। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র না থাকায় সেখানে কোনো কাজ জোটেনি। নিরুপায় হয়ে তিনি ১৫ মাস কাটিয়েছেন রাস্তায়, মসজিদে আর ফ্লাইওভারের নিচে—অধিকাংশ সময়ই অনাহারে। শেষ পর্যন্ত এক হাসপাতালের গেটেই থেমে যায় তার জীবনের পথচলা।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) গোবিন্দগঞ্জের রসুলপুর বালুপাড়া গ্রামে সাফিউলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মৃত্যুর শোকে মুহ্যমান পরিবার। শেষবারের মতো ছেলের মুখ দেখার অপেক্ষায় অস্থির মা মোছা. মহিলা বেগম ও দিনমজুর বাবা মো. জলিল শেখ। বারবার দালালের শাস্তি দাবি করতে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়ছেন তারা।

জানা গেছে, গত বছর মে মাসে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব পাড়ি দেন সাফিউল। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ ও স্থানীয়ভাবে সুদে টাকা ধার করে যাত্রা করলেও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় চাকরি পাননি তিনি। টাকা-পয়সা ফুরিয়ে গেলে মসজিদে মসজিদে ভিক্ষা করে কোনোভাবে দিন কাটাতে হয়েছে তাকে। রাস্তায়, ফ্লাইওভারের নিচে অনাহারে-অবহেলায় কেটেছে দীর্ঘ ১৫ মাস। অবশেষে গত ২৮ জুলাই চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয় তার।

সাফিউলের মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছাতেই স্তব্ধ হয়ে যায় সবাই। পরিবারের একমাত্র আশার আলো ছিলেন তিনি। মা-বাবার কান্না থামছেই না। বৃদ্ধ বাবা জলিল শেখ বলেন, ছেলেকে ঋণ করে বিদেশ পাঠিয়েছি, এখন তার মরদেহ আনতেও পারছি না।

গ্রামবাসীরা জানান, একই দালালের ফাঁদে পড়ে আরও অনেক যুবক বিপদে পড়েছেন। সাফিউলের সঙ্গী রনিও এখন সৌদিতে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। দালালটি এখনো আত্মগোপনে রয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা কর্মসংস্থান অফিস জানিয়েছে, সাফিউলের মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি দালালি প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট সাফিউলের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারকে নয়, পুরো গ্রামকে করুণ এক গল্প দিয়ে গেল। দালালদের প্রতারণার শিকার হয়ে প্রতিবছর কত প্রাণ যে ঝরে যায়, তারই করুণ প্রতিচ্ছবি এই ঘটনা।

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ