আলহামদুলিল্লাহর ফজিলত
আলহামদুলিল্লাহ আরবি ভাষার একটি স্বতন্ত্র বাক্য। এটি শব্দ নয়,পবিত্র কুরআনে এ বাক্যটি ২১ বার উল্লিখিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনের শুরু হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ শব্দ দিয়ে। মুসলিমরা তাদের প্রতিপালকের মাহাত্ম্য-মহিমা, শ্রেষ্ঠত্ব-মর্যাদা বর্ণনা ও প্রশংসার জন্য এ বাক্যটিকে মুখে উচ্চারণ করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালার মাহাত্ম্য বর্ণনা ও প্রশংসার জন্য আলহামদুলিল্লাহর চেয়ে উত্তম বাক্য আর নেই। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি যে, সর্বোত্তম জিকর হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আর সর্বোত্তম দোয়া হলো ‘আলহামদুলিল্লাহ’। (তিরমিজি-৩৩৮৩)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যদি আমার কোনো উম্মতকে পুরো দুনিয়া দিয়ে দেয়া হয় আর সে আলহামদুলিল্লাহ বলে তাহলে এই শব্দ পুরো দুনিয়া থেকে উত্তম। অর্থাৎ পুরো পৃথিবী পেয়ে যাওয়া এত বড় নিয়ামত নয়, যা আলহামদুলিল্লাহ বলার মধ্যে রয়েছে। কারণ এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহর সওয়াব থেকে যাবে।
মানুষের দেহের বাইরে ভোগ্য-অভোগ্য, দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান অসংখ্য নিয়ামত, যা মূলত মহান আল্লাহরই মহাঅনুগ্রহ, মহাদান। এসব নিয়ামতের বেশির ভাগ মানুষ আল্লাহর কাছে চায়, আবার কোনোটি না চাইলেও মহান রব তার বান্দাদের আপন অনুগ্রহে দান করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যেসব বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদের দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা করো, তবে গোনে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয়ই মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা ইবরাহিম-৩৪)
একজন মানুষ আল্লাহ তায়ালার কী পরিমাণ নিয়ামত ভোগ করে তা কল্পনারও বাইরে। সুস্থ দেহ, সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, সুস্থ মন, সুস্থ পরিবেশ- সব কিছুই তাঁর নিয়ামত। সামান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হলেই বুঝে আসে এ নিয়ামতের মর্ম। উঠতে-বসতে, নিদ্রা-জাগরণে, ঘরে-বাইরে সর্বত্রই আমরা তাঁর নিয়ামতের সাগরে ডুবে আছি সর্বক্ষণ। তাই প্রতিদিনকার প্রতিটি পদক্ষেপে রাসূলুল্লাহ সা: আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা সংবলিত বিভিন্ন দোয়া। আর এ দোয়াগুলো শুরু হয়েছে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বাক্য দিয়ে।
ভোরে ঘুম থেকে জাগার পর পড়ি ‘আলহামদুলিল্লাহিল লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।’ অর্থ- ‘সব প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করেছেন এবং তার দিকেই আমাদের পুনরুত্থান।’ (বুখারি-৩১১২)
খাবার খাওয়ার শেষে পড়ি ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা, ওয়াসাকানা, অজাআলানা মুসলিমিন’। অর্থ-‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন।’ (আবু দাউদ-৩৮৫০)
এভাবে আলহামদুলিল্লাহ বাক্যের আগে-পরে বিভিন্ন শব্দ সমন্বয়ে আল্লাহর শুকরিয়ার বিভিন্ন দোয়া রয়েছে হাদিসে। যার মর্মার্থ হলো- সব কিছুতে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা বান্দার উচিত এবং এতেই আল্লাহ তায়ালা খুশি হন।
মূলত কৃতজ্ঞ বান্দাকেই আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন এবং তিনি চান বান্দা শোকরগুজার হোক। প্রিয়নবী সা: রাত জেগে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নফল নামাজ পড়তে গিয়ে কখনো তাঁর পা ফুলে যেত। আয়েশা রা: একদিন জানতে চাইলেন- আপনি এত কষ্ট করেন কেন, আল্লাহ কি আপনার আগে-পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেননি? রাসূল্লাহ সা: উত্তরে বললেন, ‘আমি কি একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হতে চাই না?’ (বুখারি-৪৮৩৭) আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা মুমিনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। পরকালীন সমৃদ্ধির পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনেও আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আরো বেশি নিয়ামত লাভের মাধ্যম এ কৃতজ্ঞতা। আর আখিরাতের অসীম পুরস্কারের ঘোষণা তো আছেই। শেষ কথা হলো- মুসলিম উম্মাহকে সব কিছুতে সর্বাবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুখের সময় আলহামদুলিল্লাহ পড়লে যেমন সওয়াব, দুঃখের সময় পড়লেও সওয়াব। তা ছাড়া এটি হাদিসের বর্ণনায় সর্বোত্তম দোয়া।