
সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্য প্রমাণ করছে , পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে ইরান । এটার প্রমান পেয়েই অস্থির হয়ে উঠেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন তিনি ইরানে সামরিক হামলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কারণ, এর আগে কখনোই এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এখন ইরানে হামলা চালানোর উপযুক্ত সময় ও সুযোগ একেবারে তাঁর হাতের নাগালে এসে গেছে।
এরফলে যে কোন সময় আমেরিকা একতরফাভাবে ইরানে ‘preemptive strike’ চালাতে পারে। প্রাথমিকভাবে ইরানের নির্দিষ্ট পারমাণবিক স্থাপনাতেও বোমা হামলা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ।
আমেরিকার কাছে এখনই সঠিক সময় ইরানে ‘প্রাথমিক আঘাত’ হানার। তবে প্রাথমিকভাবে তারা একে বড় যুদ্ধ নয়, বরং ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করতে পারে।
রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা সাউথ ডাকোটার সিনেটর জন থুন বলেছেন, ইরানে মার্কিন সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কারণ তিনি প্রেসিডেন্টের হাত বাঁধতে চান না।
জন থুন বলেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র মূলত প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে, তবে একসময় সেখানে আক্রমণাত্মক ভূমিকাও নিতে হতে পারে। ”
তিনি আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত বিষয়টি শেষ হতে হবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পরিত্যাগ করার মধ্য দিয়ে।
জি-৭ বৈঠক থেকে তড়িঘড়ি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশে ফিরছেন। তিনি হুমকীর শুরে বলেছেন, ইরান-ইস.রায়েল সংঘাতে ভয়ঙ্কর কিছু হতে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তেহরানের বেসামরিক লোকজনের শহরে থেকে নিরাপদে সরে যেতেও বলেছেন। প্রতিপক্ষ দেশের বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান সাধারণত সামরিক হামলার পূর্বাভাসে দেয়া হয়। এটি সারা বিশ্বে “war preparation language” হিসেবে পরিচিত।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সতর্কবার্তা প্রমান করছে যে, ইরান-ইস.রায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতে আমেরিকা এবার সরাসরি জড়িত হচ্ছে। পরিস্থিতি বলছে,ইস.রায়েলের পক্ষ নিয়েযে কোন সময় ইরানে সামরিক হামলা চালাবে আমেরিকা
ইস.রায়েল বারবার দাবি করেছে, ইরান তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তাই তারা ইরানকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চায়।
অপরদিকে ইরান হামাস, হিজবুল্লাহ, হুথি, ইরাকি মিলিশিয়া তথা ইরান তার ‘প্রক্সি মিত্রদের’ মাধ্যমে ইসরায়েলকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইন, জর্ডান, ইরাক, কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সৌদি আরব এবং সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিও ইরানী হামলার টার্গেটে রয়েছে।
ইরান সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র বা ইস.রায়েলকে লক্ষ্য করে ব্যাপক প্রতিশোধ নিতেই পারে। খুব সম্ভবত সৌদি আরব, কুয়েত অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হামলাও চালাতে পারে ইরান। এটা হলে আমেরিকা সরাসরি হামলা চালাবে ইরানে।
ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযানের পরবর্তী পর্যায়ে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে ইরান।
ইস.রাইল রাষ্ট্রের শুরু থেকেই ইস.রায়েলের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করে আসছে আমেরিকা। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ইস.রায়েলের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড বরাবরই ইরানের বিরুদ্ধে অতিমাত্রার আগ্রাসী। তিনি এর আগেও ইরান চুক্তি বাতিল করেছিলেন। আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে কোনো ‘জাতীয় নিরাপত্তা সাফল্য’ দেখানো তাঁর জন্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি এবং সরাসরি সহায়তা ছাড়া ইস.রায়েল কখনোই ইরানে সরাসরি হামলা করতে পারে না। সেদিক থেকেও এখন যেহেতু ইরানের হামলায় ইস.রায়েল কাহিল হয়ে পড়ছে, সেহেতু যে কোন সময় আমেরিকা সামরিক হামলা চালাতে পারে ইরানে।
…………………………
ডিফেন্স অ্যানালাইসিস
…………………………
লেখক: এফ শাহজাহান
সাংবাদিক ও কলামিস্ট