বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নিভৃতপল্লী মাদলায় দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি—মাদলা জমিদার বাড়ি। প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এই স্থাপনাটি আজও অতীতের গল্প বলে, স্মরণ করিয়ে দেয় মুঘল আমলের জমিদারি ঐতিহ্য।
জানা যায়, মুঘল শাসনামলে জমিদার বিশ্বনাথ সরকার বগুড়ার নবাবের কাছ থেকে জমিদারি লাভ করেন এবং এই মাদলায় তার প্রাসাদোপম বাড়ির গোড়াপত্তন করেন। বিশ্বনাথ সরকারের হাত ধরে শুরু হয় মাদলা জমিদারির এক দীপ্ত ইতিহাস।
তার উত্তরসূরি সুরেন্দ্রনাথ সরকার ও নরেন্দ্রনাথ সরকার ছিলেন এই জমিদারির দক্ষ অভিভাবক। সময়ের পরিক্রমায় জমিদার নরেন্দ্রনাথের ছেলে বিমলেন্দু নাথ সরকার এবং সুরেন্দ্রনাথের ছেলে ক্ষিতেন্দ্রনাথ সরকার জমিদারির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও, জমিদার পরিবারটি মাদলার এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। তবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতায় এই বাড়িটি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। যুদ্ধের উত্তাপে নিঃশেষ হয়নি কেবল ইট-পাথর; ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি ইতিহাস, একটি পরিবার, একটি সময়।
বর্তমানে মাদলা জমিদার বাড়িটি হারানো গৌরবের সাক্ষ্য বহন করছে। সময়ের অবহেলায় আর যত্নের অভাবে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি আজ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। অথচ একটু সংস্কার, সংরক্ষণ আর পরিকল্পিত উদ্যোগই পারে এই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে দিতে তার হারানো সম্মান।
স্থানীয়দের দাবি, সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি উদ্যোগ নেয়, তবে এটি কেবল একটি দর্শনীয় স্থান নয়—একটি ইতিহাসভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে।
মাদলা জমিদার বাড়ি শুধু একটি প্রাচীন ভবন নয়; এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার একটি অনন্য দলিল।