সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
গত এক সপ্তাহ ধরে নিত্যপণ্য সহ সবজির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কাঁচামরিচের দাম বেড়ে চারশ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছিল। তবে বর্তমানে ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। তবে খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করেছে বলে জানান ভোক্তারা। আলু, পেঁয়াজ এবং রসুনের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কমেছে পোল্ট্রি মুরগি, সোনালী মুরগির দাম।
ভোক্তারা বলছেন, রসুন, পেঁয়াজ সহ আলুর দাম বাড়ায় এগুলো নিম্নবিত্ত পরিবারের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। খুচরা এবং পাইকারি দামে বেশ ফারাক রয়েছে বলে অনেক ভোক্তাদের অভিযোগ। তারা বলেন, গরিব মানুষ কম কম করে কিনে খায়, কিন্তু দাম বেশি দিতে হচ্ছে। এগুলো কর্তৃপক্ষ দেখা দরকার। এদিকে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন।
বুধবার সকালে শহরের জেল রোড এলাকা, কিচেন মার্কেট, জগন্নাথ বাড়ী রোড, ওয়েজখালী বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু প্রতি কেজি ৫৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা, পেঁয়াজ দেশী প্রকারভেদে ১১০-১২০ টাকা এবং এলসি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রসুন দেশী প্রকারভেদে ২১০-২২০ টাকা, চায়না রসুন ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে দেশী রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকা দরে। এ সপ্তাহে প্রতি কেজিতে ২০-৪০ টাকা করে দাম বেড়েছে।
গত সপ্তাহে কাঁচামরিচের কেজি ছিল ৩৫০-৪০০ টাকা। যা কমে এ সপ্তাহে ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই দিন আগে পাইকারি ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
পোল্ট্রি মুরগির কেজি এই সপ্তাহে ১৬০-১৭০ টাকা ও সোনালী মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা। লেয়ার প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে পোল্ট্রি মুরগির কেজি ছিল ১৮০-২০০ টাকা। এ সপ্তাহে প্রতি কেজিতে ২০-৪০ টাকা কমেছে। সোনালী মোরগী এবং লেয়ারের দাম এ সপ্তাহে ২০-৫০ টাকা কমেছে। এদিকে ঝিঙার দাম কিছু বাড়লেও চিচিঙ্গা, করল্লা, মুখি, বেগুন সহ কিছু সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
টুকের বাজার এলাকা থেকে এসেছেন রিকশা চালক রিপন মিয়া। কিচেন মার্কেট এলাকায় পাঙ্গাশ মাছ কিনে সবজি কিনতে এক খুচরা বিক্রেতার সাথে পেঁপে কত টাকা কেজি জানতে চাইলে বিক্রেতা ৪০ টাকা কেজি বলার পর তিনি হাফ কেজি পেঁপে ২০ টাকায় কিনেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এক কেজি পাঙ্গাশ মাছ ১৮০ টাকায় কিনেছি। হাফ কেজি পেঁপে ২০ টাকায় কিনেছি এবং হাফ কেজি আলু ৩০ টাকায় কিনেছি। সাথে ২০ টাকার কাঁচামরিচ কিনেছি। বাজারে অন্যান্য সবজি কিনে খাওয়ার মতো আমাদের তৌফিক নেই। সারাদিন রোজী করে যে টাকা পাই, তা দিয়ে বাজার-সদাই করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে দুইবেলা খাই। আয় রোজগার থেকে ব্যয় বেশি, চলতে কষ্ট হয়। জিনিস পত্রের দাম আরও কমানো উচিত। এইটা সরকারের দেখা দরকার।
বাজার করতে আসা রফিক আহমেদ বলেন, জেল রোড এলাকায় সকালে গিয়ে দেখা যায়, পেঁপে ১৮-২০-২২ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। অথচ খুচরা বাজারে বিক্রেতারা এই পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। কাঁচামরিচের কেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা দরে। অথচ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে। এইভাবেই প্রতিটা নিত্যপণ্য সহ সবজির দামে পার্থক্য রয়েছে। এতে করে গরিবের সর্বনাশ হচ্ছে। গরিব মানুষ কম কম করে কিনে খায়, দামও বেশি দিতে হচ্ছে। এগুলো কর্তৃপক্ষ দেখা দরকার।
খুচরা বিক্রেতা গোপী রঞ্জন সরকার বলেন, সবজির দাম স্থিতিশীল আছে। শুধু কাঁচা মরিচের দামটা উঠানামা করছে। আমরা কম দামে এবং কম লাভে বিক্রি করতে চাই। বাইরের জেলা থেকে প্রচুর পরিমাণে সবজি আমদানি করা হলে সুনামগঞ্জে দামটা কমে। আমদানি কমে গেলে দামটা বেড়ে যায়। তবে কয়দিন ধরে সবজির দাম অনেকটা কমেছে।
পাইকারি বিক্রেতা প্রসেনজিৎ দে জানান, পেঁয়াজ এবং রসুনের দাম কিছুটা বেড়েছে। কাঁচামরিচ দুই দিন আগে ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পেরেছি। তবে আজকে ১৮০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম অপরিবর্তিত আছে। কয়দিন ধরে খুচরা বিক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকায় বিক্রি কম হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন বলেন, আমরা বাজার তদারকি করছি। পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে। এরপরও ব্যবসায়ীদের কেউ যদি সিন্ডিকেট করে পণ্য সহ সবজির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে চায় এবং প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।