
গ্রাম্য সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার্থীর পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ ওঠেছে। এমনকি ওই পরিবারের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে নিষেধ করে দেন গ্রামের মাতবররা। এছাড়া তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করতেও দোকানদারদের নিষেধ করা হয়। অন্যথায় তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে হুমকি দেন মাতবররা।
এ অবস্থায় পরীক্ষার্থী মেয়েকে নিয়ে গত সাতদিন ধরে অন্য একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে পরিবারটি। পরে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনাটি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে।
গ্রেফতাররা হলেন উপজেলার আগকলিয়া গ্রামের আবদুল বাতেন কাজী (৩০), মো. হাশেম ওরফে হাসু (৬০), মো. ইউনুছ কাজী (৬৫), পাষান কাজী (৫৫) এবং আনছের কাজী (৩৫)। তাদের মধ্যে আবদুল বাতেন ছাড়া বাকি চারজনই গ্রামের মাতবর।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, আগকলিয়া গ্রামের হানিফ কাজী এবং আবদুল বাতেন কাজী সৎ ভাই। এরমধ্যে ঢাকায় একটি ছাপাখানায় কাজ করেন হানিফ। আর বাতেন চালান ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক।
হানিফের বাড়ির উঠানের ওপর দিয়ে ইজিবাইক বাড়িতে নেন বাতেন। প্রায় এক মাস আগে হানিফ নিজের বাড়ির ফটকে লোহার গেট করায় ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি যেতে পারেন না বাতেন। এ নিয়ে হানিফ ও বাতেনের পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
এ ঘটনায় সম্প্রতি গ্রামের মাতবরেরা সালিশ বৈঠক ডাকেন। ১০ মে এই বৈঠক হয়। তবে ঢাকায় থাকায় হানিফ সালিশে উপস্থিত হতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামের মাতবররা সালিশের দিন হানিফের পরিবারকে একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত দেন।
মাতবরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হানিফের পরিবারের কাছে গ্রামের কোনো দোকানদার পণ্য বিক্রি করতে পারবেন না। তাদের সঙ্গে কেউ কথা বলতে পারবেন না। যদি কেউ এই নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
হানিফ কাজীর স্ত্রী নাছিমা আক্তার জানান, তার স্বামী ঢাকায় থাকায় ছুটি না পাওয়ায় সালিশে উপস্থিত হতে পারেননি। এ কারণে সালিশের দিন থেকে তাদের একঘরে করে রাখেন গ্রামের মাতবররা। এমনকি তাদের কাছে কোনো কিছু বিক্রি করতে দোকানদারদের হুমকি দেন। পণ্য বিক্রি করলে জরিমানা করা হবে বলে ঘোষণা দেন।
একই সঙ্গে বাড়ির রান্নাঘর, বাথরুমের সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে দেন মাতবররা। এই অবস্থায় তিনদিন থাকার পর বাধ্য হয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে নিয়ে অন্য একটি গ্রামে আশ্রয় নেয় হানিফের পরিবার।
এসএসসি পরীক্ষার্থী হানিফ কাজীর মেয়ে তামান্না ইসলাম বলেন, বেড়া দেওয়ার পরও বেড়ার ফাঁক দিয়ে যাতায়াত করে কষ্ট করে কয়েকদিন ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম, বেড়ার ফাঁকাও বন্ধ করে দিয়েছে, আর দোকানে গেলে দোকানদারও কথা বলেন না, কিছু বিক্রিও করেন না। পরে পরীক্ষা দিতে এবং জীবন বাঁচাতে পরিচিত এক চাচার বাড়িতে আশ্রয় নিছি। ওই চাচার বাড়ি থেকে এখন এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৮ মে) রাতে নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে গ্রামের মাতবরসহ ১২ জনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর শনিবার (২০ মে) বিকেলে মামলা নথিভুক্ত করা হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে অভিযুক্ত ইউনূস কাজী সাংবাদিকদের বলেন, গ্রামের মাতবরদের কথা অমান্য করায় হানিফ কাজীর পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে। গ্রামে থাকলে মাতবরদের কথা আগে শুনতে হবে, তারপর আইন মানতে হবে।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম মোল্ল্যা বলেন, একঘরে করে রাখা অমানবিক এবং তা বেআইনি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়। শুক্রবার ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করা হয়। ওসি আরও জানান, ভুক্তভোগী পরিবারকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।।