৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

দাঁড়িপাল্লা আর ধানের শীষের লড়াই

spot_img

ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিল। বাংলাদেশের ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসসদ নির্বাচন আসলে কখন অনুষ্ঠিত হবে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, আগমী নির্বাচনে দেশের বড় দুই দলের ব্যাপক জনপ্রিয় দলীয় প্রতীক-ধানের শীষ আর দাঁড়িপাল্লার লড়াই জমে উঠবে, তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

১৩ জুন লন্ডন বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা ১৪ জুন দেশে ফিরেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে নির্বাচন কমিশনকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাই নির্বাচন কবে হবে, সেটা এখনো আন্দাজ অনুমানের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।

তবে নির্বাচন যখনই হোক, এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ঠ্য হবে দ্বিমেরু কেন্দ্রিক ভোটের লড়াই।

আগামী নির্বাচনের আগেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে মূলত ২ শিবিরে বিভক্ত হওয়ার আলামত দেখা দিচ্ছে। একদিকে বিএনপি কেন্দ্রিক জোট আর অন্যদিকে জামায়াত কেন্দ্রিক জোটের তোড়জোড় স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

এবারের জাতীয় নির্বাচনের মূল লড়াইটাও হবে হবে মূলত বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষ আর জামায়াতের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লার মধ্যে।

দীর্ঘ ৭ বছর পর গত ২৪ জুন নির্বাচন কমিশনেরে নিবন্ধন এবং দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলীয় প্রতীকসহ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহাল করে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।

এর ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়েই অংশ নিতে পারবেন জামায়াতের প্রার্থীরা। এতে করে দলটির নেতা-কর্মীরা যেমন উজ্জীবিত, তেমনি জামায়াতের ভোটব্যাংকেও উচ্ছাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে আসন ভাগাভাগি এবং একক প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।

ইসলামী জোটের সঙ্গে নবগঠিত এনসিপিও নির্বাচনী জোট করতে পারে। তবে এনসিপি নির্বাচনী জোট করুক আর না করুক, মূলত ভোটযুদ্ধটা হবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট আর জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যেই।

অপর দিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট আসন ভাগাভাগি এবং সকলেই বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।

বিএনপি-জামায়াতকে কেন্দ্র করে ইতমধ্যেই অন্যান্য দলগুলো জোটবদ্ধ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগে থেকেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১২ দলীয় একটা জোট আছেই। এবার নির্বাচন উপলক্ষ্যে তাতে আরো কয়েকটি দল যোগ দিতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য।

ভোটকেন্দ্রিক জোটের হিসাব-নিকাশে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, বিএনপির ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে নতুন করে ‘ নাম-বাম-নিধিরাম’ এসেও জোটবদ্ধ হতে পারে।( এখানে ‘নাম’ অর্থ কিছু নামসর্বস্ব দলকে,‘বাম’ অর্থে বামপন্থী দলগুলোকে এবং ‘নিধিরাম’ বলতে পলাতক আওয়ামী লীগের ছদ্মবেশি নেতাদের বুঝানো হয়েছে)।

বিএনপি জোটের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং দেশের অন্যান্য ইসলামী দল চব্বিশের রক্তঝরা বিপ্লবের পর থেকেই বলে আসছে, এবার সব ইসলামী দল জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিবেন।

আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমল থেকেই জামায়াতে ইসলামী অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ার নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জুলাই অভূত্থানের পর জামায়াত এবিষয়ে আরো বেশি তৎপরতা দেখিয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই ইসলামভিত্তিক দল ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনাও শুরু করেছিলো জামায়াতে ইসলামী।

এখনো ইসলামী দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনী জোটগঠনের আলোচনার জোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে জামায়াত।

জামায়াতের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই ইসলামী দলগুলোর জোটবদ্ধ একটি রূপ দেখা যাবে ইনশাআল্লাহ।

সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, ‘‘আমরা চাই আগামী নির্বাচনে ‘ইসলাম ভিত্তিক দলগুলোর যেন একটিমাত্র বাক্স থাকে। নিজেদের মধ্যে মত পার্থক্য ভুলে আমরা চাইছি আমাদের ভোট যেন সামনে আর ভাগাভাগি না হয়’’।

হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদীও জানিয়েছেন যে ‘‘ইসলামি দলগুলোর ঐক্য প্রক্রিয়া অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে’’।

শেষপর্যন্ত যদি জামায়াত ও বিএনপি কেন্দ্রিক নির্বাচনী জোট না হয়, তবুও নির্বাচনের দুই মেরুতে থাকবে এই প্রধান দুই দল। শুধু দুই দলের দুই প্রতীকে নির্বাচন হোক আর না হোক, এবারের ভোটযুদ্ধটা মূলত ধানের শীষ আর দাঁড়িপাল্লার মধ্যে হবে; তাতে কোন সন্দেহ নেই।
……………………………
লেখক: এফ শাহজাহান
সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ