জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যে, বাংলাদেশে হিংসা হানাহানি এবং প্রতিশোধের রাজনীতির কবর রচনা হবে। শুধু প্রতিশোধের পর প্রতিশোধ? তাহলে এই জাতি বাঁচকে কিভাবে? একটা জায়গায় এর পরিসমাপ্তি হওয়া উচিত।’ শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগের নাম না নিয়ে ওই দলটির আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নৈতিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘লোকেরা বলে এরা নাকি আগামী ইলেকশনে আসতে পারে। আমি বলি ভোট তো চাইবে জনগণের কাছে। কোন জনগণের কাছে? গোটা ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যারা হাতে অস্ত্র নিয়ে গুলি ছুঁড়েছিল সেই জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার কোন নৈতিক অধিকার তাদের আছে? তাদের নাম এখন বাংলাদেশের জনগণ শুনতে চায় না। যারা তাদের কথা বলে জাতিকে ভয় দেখায় তাদেরকে বলবো, বিরত থাকুন। জাতিকে বোকা ভাববেন না। জাতি সবার সবকিছু বোঝে। ওই জুজুর ভয় দেখাবেন না। বাংলাদেশের মানুষ যাদের গুলির পরোয়া করে না সেই দুর্ধর্ষ খুনিদেরকে বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশে প্রকাশ্যে আসতে দিবে না ইনশাআল্লাহ। আগে তাদের বিচার হবে তার পর দেখা যাবে তাদের কি হয়।’
ইসলামী বগুড়া শহর শাখার আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন দলটির সহকার সেক্রেটারি জেনারেরল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, জামায়াতে ইসলামীর জয়পুরহাট জেলা শাখার আমীর ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ ও সিরাজগঞ্জ জেলার আমীর শাহনূর আলম।
আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন,২০০৯ সালে বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় ৫৭জন চৌকশ দেশপ্রেমী অফিসারকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে জুলুমের রাজত্ব শুরু হয়েছিল। যার সমাপ্তি হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রতিটি হত্যাকাÐের বিচার দাবি করে বলেন, ‘অতীতে আমাদের ওপর যেসব বড় বড় অপরাধ করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার, আমাদের নেতৃবৃন্দকে খুন করেছে, কার্যালয়ে তালা দিয়েছে, আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছে, আমাদের প্রতীক কেড়ে নিয়েছে, আমাদের নিষিদ্ধ করেছে- মোটা দাগে যে অপরাধগুলো করেছে তার জন্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিব না। কিন্তু তারা যাদেরকে খুন করেছে, গুম করেছে পঙ্গু করেছে মাুনুষের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে তার প্রত্যেটার বিচার হওয়া উচিত।
বাংলাদেশের মানুষ এখন মুক্ত বাতাসে শ^াস নিতে পারছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগের) জুলুম নির্যাতন থেকে বাংলাদেশের কোন এলাকা কিংবা ব্যক্তি বাদ যাননি। শুধুমাত্র স্বৈরাচার এবং তাদের দোসররা ছাড়া। এরা সংখ্যায় অতি নগন্য। কিন্তু সাড়ে ১৫টি বছর দেশের শান্তিকামী জনগণের ওপর তারা তাÐব চালিয়েছে। অসংখ্যক মায়ের বুক খালি করেছে। অসংখ্য বোনকে বিধবা বানিয়েছে অসংখ্য সন্তানকে এতিম বানিয়ে ছেড়েছে। কাউকে করেছে গুম, কাউকে করেছে খুন কাউকে করেছে পঙ্গু।এইভাবে তারা ১৫ বছর ধারাবাহিক তাÐব চালিয়েছিল। যখনই জনগণ তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার চেস্টা করেছে শক্তির জোরে তারা জনগণের আন্দোলকে দমন করার চেষ্টা করেছে। তারা হম্বিতম্বি করতো, অহংকার করতো গর্ব করে বিরোধীদের আন্দোলন নিয়ে উপহসান করতো।
ডা. শফিকুর রহমান জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই যে বাংলাদেশে প্রতিটা শিশু জন্ম নেওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন নাগরিকের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবে। শিশু সে ধনীর ঘরে জন্ম নিয়েছে নাকি গরীবের ঘরে জন্ম নিয়েছে সেটি প্রশ্ন নয়। সে জন্ম নেওয়ার পর তার ৪টি অধিকার রাষ্ট্রকে দিতেই হবে। এক. তার খাওয়া পরার অধিকার, দুই. তার চিকিৎসার অধিকার তিন. তার শিক্ষার অধিকার চার তার হাতে কাজ তুলে দেওয়ার বা কাজ পাওয়ার অধিকার। এই ৪টি অধিকার তাকে দিতেই হবে। আমরা চাই না এই জাতিকে কেউ আর বিভক্ত করুক। আমরা মেজরিটি মাইনরিটি শব্দ শুনতে চাই না। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছে তারা সকলেই মর্যাদাবান গর্বিত নাগরিক। ধর্ম যার যার, দলও যার যার প্রিয় দেশটি আমাদের সবার।