
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি: ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে একটি পা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন রফিকুল ইসলাম (৫০) নামে এক আইসক্রিম বিক্রেতা। একসময়ের কর্মঠ মানুষটি আজ একটি জরাজীর্ণ কুটিরে সন্তানহীন স্ত্রীকে নিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। রফিকুল ইসলাম বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের পৌতা গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে।
জানা যায়, গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভ্যানে ফেরি করে আইসক্রিম বিক্রি ও ভাঙারি কিনতেন রফিকুল ইসলাম। যা রোজগার হতো সেই টাকা দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। হঠাৎ তিন বছর আগে আইসক্রিম বিক্রি করতে গিয়ে তার বাম পায়ের রগে রক্ত জমাট বাঁধে। একাধিকবার বগুড়া এবং ঢাকায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েও তার পায়ের উন্নতি হয়নি। বাধ্য হয়ে দেড় বছর আগে তার বাম পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে। তাঁর পরিবারে উপার্জনক্ষম আর কেউ না থাকায় তাঁর পুরো পরিবারের ওপর নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। বর্তমানে স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন রফিকুল ইসলাম।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কোনো কাজ করতে না পারা রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর স্ত্রী দিনের বেলা বিভিন্ন জায়গায় হাত পেতে যা পান, তা দিয়েই কোনোমতে একবেলা পেট ভরে ভাত জোটানো সম্ভব হয় না। ওষুধের অভাবে তাঁর পুরনো ক্ষতস্থানগুলি প্রায়শই ভোগায়।
তিনি বলেন, “খাওয়ার কষ্ট তো আছেই, কিন্তু রাতে যখন ব্যথা বাড়ে, তখন মনে হয় এর চেয়ে মরণ ভালো।” এই চরম দারিদ্র্য এবং অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই তাঁকে গভীর মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। তার কৃতিম পা বা স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা হলে হয়তো সংসারের হাল ধরতে পারবেন।
রফিকুল ইসলামের স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, আমার স্বামী একটি পা হারিয়ে দেড় বছর যাবৎ আমরা কষ্টে দিন পার করছি। আমাদের জায়গা নেই জমি নেই, অন্যের জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করছি। আমার স্বামীর জন্য প্রতিবন্ধি ভাতা কার্ড করতে সমাজসেবা অফিসেও গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিলো। টাকা দিতে পারিনি বলে কার্ড করে দেয়নি। আমি হাটে-বাজারে, গ্রামে ঘুরে সাহায্য করে স্বামীর জন্য ঔষধ কিনি এবং কোনমতে সংসার চালাচ্ছি।
প্রতিবেশি আলম হোসেন জানান, “আমরা সবাই মিলে সামান্য কিছু সাহায্য করার চেষ্টা করি, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। একটি কৃত্রিম পা বা স্থায়ী আয় অথবা প্রতিবন্ধি ভাতা কার্ডের কোনো ব্যবস্থা করতে পারলে হয়তো মানুষটি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।
এবিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি আমি অবগত নই। আমার অফিসের কেউ যদি জড়িত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং ওই প্রতিবন্ধি ব্যাক্তির প্রতিবন্ধি ভাতা কার্ডের জন্য যাচাই করা হবে।