৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নিত্যপণ্যের বাজারে চাপা পড়ছে মধ্যবিত্তের সাধ

spot_img

চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, সবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংস কোনো কিছুই আর আগের দামে নেই। প্রতিদিন পণ্যের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে। বাজারে গেলেই চোখে পড়ে মানুষের অসহায়ত্ব। এক সময় যে পরিবার মাসের শুরুতেই একসঙ্গে বাজার করত, এখন তা ভাগ করে সপ্তাহে নামিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম করে কিনে কোনো মতে বেঁচে থাকার লড়াটা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিত্যপণ্যের দাম সামলাতে গিয়ে কমছে ভোজনের তালিকাও। এছাড়া মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে এখন দাওয়াত বা মেহমানদারি যেন বিলাসিতা। কেউ বাড়িতে আসার আগেই মনে পড়ে কেনাকাটার বাজেট। তাই আগেভাগেই ‘না’ করে দিচ্ছেন অনেকেই। শুধু বাজার খরচ নয়, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চিকিৎসা, শিক্ষা, যাতায়াতসহ সব খাতে। সব মিলে পণ্যের দাম মেটাতে গিয়ে অন্য অনেক প্রয়োজনীয় খরচেও কাটছাঁট করতে গিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে চাপা পড়ছে মধ্যবিত্তের সাধ। আর চুলায় হাঁড়ি চাপাতে হিমশিম খাচ্ছেন গরিব মানুষ।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে হঠাৎ করেই উত্তপ্ত নিত্যপণ্যের বাজার। খুচরা পর্যায়ে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। অসহনীয় দাম চালের বাজারেও। গরিবের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। আর সরু চাল ৯০ টাকা পর্যন্ত। অজুহাতের দেশে সবজির দিকে তাকানো এখন বড় দায়। অনেক সবজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজির উপরে। মসুরের ডালের কেজিও ১৫০ টাকা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে, নিম্ন আয়ের মানুষের ডাল, ভাত ও সবজি জোগানোও এখন স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাতে ডিম তুলতেও কষ্টের সীমা নেই। ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা। খেটে খাওয়া মানুষের সাধ থাকলেও উচ্চ মূল্যের কারণে সাধ্যের মধ্যে মাছ-মাংস কিনতে পারছেন না। উচ্চমূল্যের কশাঘাতে মধ্যবিত্তরাও পড়েছেন বেকায়দায়।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন  বলেন, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সারা বছর একই প্রক্রিয়ায় মূল্য কারসাজি করে ক্রেতাকে ঠকাচ্ছে। তবে এর বিপরীতে সরকারের তরফ থেকে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া ভোক্তাকে স্বস্তিতে রাখতে তদারকি সংস্থাগুলোর কোনো গবেষণা নেই। এমনকি নেই কোনো বাজার তদারকির পরিকল্পনা। ফলে বছরের পর বছর বাজারে ভোক্তা নিষ্পেষিত হচ্ছে। সরকারের উচিত হবে অন্যান্য সংস্কারের পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজর দেওয়া।

শুক্রবার খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮ দিনের ব্যবধানে চালের দাম কিছুটা কমলেও উচ্চ মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, এ দিন মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭-৬০ টাকা দরে। বিআর ২৮ ও পাইজাম চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা। প্রতি কেজি নাজিরশাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা।

সবজির বাজারে উত্তাপ থামছেই না। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি ঝিঙ্গা কিনতে ক্রেতার ৮০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধন্দুল ৮০ টাকা, শসা ১০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা এবং পটোল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, গোল বেগুন ১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, কচু ৬০ টাকা এবং গাজর ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

একই অবস্থা মাছ-মুরগির দোকানেও। সপ্তাহের ব্যবধানে চাষের রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ২০-৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাষের রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪২০ টাকা। প্রতি কেজি তেলাপিয়া কিনতে ক্রেতার খরচ করতে হচ্ছে ২২০-২৬০ টাকা। প্রতি কেজি পাঙাশ কিনতে ক্রেতার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় খরচ হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি চাষের চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা এবং নদীর চিংড়ি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা। প্রতি কেজি সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকা। এছাড়া প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২৫০ টাকা।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা ভ্যানচালক মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, বাজারে এসেছি আধা ঘণ্টা হয়েছে। কিন্তু কি রেখে কি কিনব বুঝতেপারছি না। যে টাকা আছে তা চাল, ডাল কিনতেই শেষ হয়ে যাবে। পরে টাকা না থাকলে এক পদ সবজিও হয়তো কেনা কঠিন হবে। অনেক পন্যের দাম শুনেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

গত কয়েক মাস ধরেই নিত্যপণ্যের বাজারে লাগাতার দাম বাড়ছেই। মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, আজকে বাজারে এসে দেখি ডালের দামও বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। সব মিলে চুলায় হাঁড়ি চাপাতেই মানসিক যন্ত্রণায় আছি। আমাদের জন্য কেউ নেই।

মালিবাগ কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, মাস শেষে যে বেতন পাই, তা দিয়ে চলতে খুব কষ্ট হয়। বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম অসহনীয়। এতে মানষিক যন্ত্রণায় পড়তে হচ্ছে। পরিবারের মুখে হাসি নেই। পারিবারিক কোনো আয়োজন করতে গেলে একশবার চিন্তা করতে হচ্ছে। অনেক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছি। আমার পরিচিত একজনের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছোট করতে বাধ্য হয়েছেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল  বলেন, বাজারে অভিযান থেমে নেই। অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে প্রতিদিন বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। অসাধু পন্থায় দাম বাড়ালে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে পণ্যের দাম সহনীয় করা হচ্ছে। ভোক্তার স্বার্থে অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ