শহীদ সাইয়েদ কুতুব রহ. ছিলেন মুসলিমবিশ্বের অন্যতম বীরপুরুষ, কালজয়ী ইসলামী চিন্তাবিদ, অপ্রতিদ্বন্দ্বী লেখক, বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইসলামী আন্দোলন 'ইখয়ানুল মুসলিমিন' এর প্রাণপুরুষ। তাঁর ক্ষুরধার লেখনী মৃতপ্রায় জাতিকে করে তুলত প্রাণবন্ত, তাদের মাঝে সঞ্চার করত সঞ্জীবনীশক্তি। মুসলিম যুবা-তরুণের সুপ্ত ঈমানী শক্তিকে করত প্রবলভাবে জাগ্রত। আর মিশরের ধর্মনিরেপেক্ষতাবাদী সরকার ও সম্রাজ্যবাদীদের তখত-তাউসে সৃষ্টি করত প্রচণ্ড তুফান।
মিশরের সেক্যুলারপন্থী সরকার যখন মুসলিম মননে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস দুর্বল ও ভঙ্গুর করা, ইসলামী নীতি-নৈতিকতাকে নিশ্চিহ্ন করা এবং ধর্মহীন সেক্যুলার চেতনায় মগজ ধোলাইয়ের পরিকল্পনা করল, তখন সাইয়েদ কুতুব তাঁর ক্ষুরধার লিখনী শক্তির মাধ্যমে মুসলমানদের সুপ্ত ঈমানী চেতনাকে জাগিয়ে তুললেন এবং ইসলামী বিপ্লবের ডাক দিলেন। আর এটাই তাঁর জন্য কাল হল। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হল। তারপর কারাগারে রিমান্ড-জিজ্ঞসাবাদের নামে চলে পৈশাচি অত্যাচার। রিমান্ডে নিয়ে তাঁকে একটানা সাত ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হত। রাতের বেলা অন্ধকার প্রকোষ্ঠে তাঁর ওপর লেলিয়ে দেয়া হত হিংস্র কুকুর। আর দিনের বেলায় চলত পুলিশি নির্যাতন। মাথায় কখনো খুব গরম, আবার কখনো অত্যন্ত ঠাণ্ডা পানি ঢালা হত। অমানুষিক নির্যাতনে অতি দুর্বল হয়ে যাওয়ার পরও সামান্য পানি পর্যন্ত দেয়া হত না তাঁকে। প্রচণ্ড নির্যাতনে অনেক সময় তিনি বেহুঁশ হয়ে যেতেন। যখনই হুঁশ ফিরে আসত তখনই তিনি বলে উঠতেন, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ (আল্লাহ মহান, সকল প্রশংসা তাঁরই)।
★ রিমান্ডে সাইয়েদ কুতুব রহ. নির্যাতন সম্পর্কে তাঁর শিষ্য ইউসুফ আল আযমের লেখা
রিমান্ডের নির্যাতন সম্পর্কে সাইয়েদ কুতুবের শিষ্য ইউসুফ আল আযম লিখেন, ‘সাইয়েদ কুতুবের ওপর বর্ণনাতীত নির্যাতন চালানো হয়। আগুন দ্বারা সারা শরীর ঝলসে দেওয়া হয়।
পুলিশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর লেলিয়ে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তাক্ত করা হয়। মাথার ওপর কখনো উত্তপ্ত গরম পানি ঢালা হত। পরক্ষণেই আবার খুবই শীতল পানি ঢেলে শরীর বরফের ন্যায় ঠান্ডা করা হত। পুলিশ লাথি, ঘুষি মেরে একদিক থেকে অন্য দিকে নিয়ে যেত।’ এই পৈশাচিক নির্যাতনে আদর্শিক ও নৈতিক অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হতেন না তিনি। এরূপ সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় তিনি নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেন মহান আল্লাহর কাছে।
★প্রথমবার গ্রেফতার সাইয়েদ কুতুব রহ.
প্রথমবার তাঁকে গ্রেফতার করে চালানো হয় নির্যাতনের ভয়ানক স্টীমরোলার। রুদ্ধ করা হয় তাঁর লিখনী। পরে আবার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে লেখালেখি করতে দিতে বাধ্য হয় সরকার। এ সময় কারাগারে বসেই তিনি রচনা করেন বিশ্বখ্যাত কালজয়ী তাফসীর ‘ফি জিলালিল কুরআন’সহ ঈমানজাগানিয়া বহু মূল্যবান গ্রন্থ। শত নির্যাতন, নিপীড়ন সত্ত্বেও জালিমের রক্তচক্ষু তাঁকে দমাতে পারেনি এতটুকুও। মিশর সরকার সাইয়েদ কুতুবকে বহু প্রলোভন দেখিয়েছে নিজ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার জন্য, কিন্তু তিনি আপসের চোরাবালিতে নিজেকে সমর্পণ করেননি কোনও প্রলোভনেই। একবার সরকারের পক্ষ থেকে টোপ দেয়া হয়, তিনি যদি সম্মত হন তাহলে তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে । সাইয়েদ এ প্রস্তাব শুনে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি দুঃখিত। মন্ত্রীত্ব গ্রহণ আমার পক্ষে সে সময় পর্যন্ত সম্ভব নয়, যতক্ষণ না মিশরেপুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে ইসলামী ছাচে ঢেলে সাজাবার এখতিয়ার দেয়া না হবে।’ সাইয়েদ নিজ আদর্শে ছিলেন অটল, অবিচল। জালিম শাসকের সাথে বিন্দুমাত্র আপোষ করেননি।
★২য় বার কল গ্রেফতার সাইয়েদ কুতুব রহ.
সাইয়েদ কুতুব ২য় বার গ্রেফতারী পরওয়ানা দেখে নিজেই নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, আমি জানি জালিমরা এবার আমার মাথাই চায়। তাতে আমার কোন দুঃখ নেই। নিজের মৃত্যুর জন্য আমার কোনও আক্ষেপ নেই। আমার তো বরং সৌভাগ্য যে, আল্লাহর রাস্তায় আমার জীবনের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে। আগামীদিনের ইতিহাসই এটা প্রমাণ করবে যে, ইখওয়ানুল মুসলীমীন সঠিক পথের আনুসারী ছিল, নাকি এই জালিম শাসকগোষ্ঠী সঠিক পথে ছিল?
★জালিমের কাঠগড়ায় সাইয়েদ কুতুব রহ. বক্তব্য
সাইয়েদ কুতুব রহ.-কে আদালতের কাঠগড়ায় মুসলিম নামধারী অনৈসলামী আদর্শের শাসক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, সে কাফের। তখন তাঁকে তাঁর কয়েকজন ছাত্র জিজ্ঞেস করল, বিচারালয়ে কেন আপনি এত স্পষ্টভাবে একথা বলতে গেলেন! কথাগুলো একটু কৌশল করে বললে হয়ত বিচারের রায় আমাদের পক্ষে হত। তিনি বললেন, বিষয়টা ছিল আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কিত। এক্ষেত্রে কোন লুকোচুরি চলে না, কোন দ্ব্যর্থবোধক কথা চলে না। যদি আমি উত্তরে বলতাম, আলহামদুলিল্লাহ, লোকটি ভাল। অথবা যদি বলতাম, শাসক হিসেবে লোকটি মন্দ নয়, একথা হত আমার ঈমান ও আদর্শের সঙ্গে প্রতারণা। ঈমান ও আদর্শের প্রশ্নে এ ধরনের লুকোচুরি ও দ্বিমুখিতা জায়েজ নয়।
আরেকবার ভরা আদালতে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জামাল নাসেরকে আল্লাহ পাক ক্ষমতা দিয়েছেন ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য, আল্লাহর মাখলুকের সেবার জন্য। তিনি নিজেকে প্রগতিবাদী, মানবতাবাদী ও স্বাধীন চেতনার দিশারী মনে করেন। অথচ তিনি মিশরের জনগণের সাথে চরম অন্যায় আচরণ করে যাচ্ছেন। তাদের সেবা তো দূরের কথা তাদের রক্ত চুষছেন। প্রতিটি পদে মানবাধিকার লংঘন করছেন এবং তৌহিদী জনতার স্বাধীনতা খর্ব করে তাদেরকে পরাধীনতার বন্দীশালায় আবদ্ধ করে রেখেছেন। একটি মিথ্যা কল্পকাহিনী তৈরী করে প্রেসিডেন্ট জামাল নাসের ইখ্ওয়ান সহ অন্যান্য ইসলাম প্রেমিক লোকদের দমন অভিযান চালাচ্ছেন। জেল, হত্যা, নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছেন। তার এ ব্যাপারে কোনই চিন্তা নেই যে, একদিন তাকে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে হাজির হতে হবে। তার প্রতিটি জুলুম ও অন্যায় আচরণের হিসাব দিতে হবে।
আল্লাহ পাক যে ন্যায়ের মানদণ্ড স্থাপন করবেন সেখানে জালেমরা পুরোপুরি তাদের অন্যায় কর্মের প্রতিফল পাবে । মজলুমরা পাবে সঠিক ন্যায় বিচার। আমি প্রেসিডেন্টকে, বিচারপতিকে এবং এখানে যারা রয়েছেন তাদেরকে এবং যারা সরকারী কর্মকর্তা তাদের সকলকে এ আহ্বান জানাতে চাই, আমরা যেন ন্যায় ও ইনসাফের পথ অনুসরণ করি; খোদাদ্রোহিতার পথ পরিহার করি। আল্লাহ পাক আমাদের হক কথা বলা ও শোনার তৌফিক দান করুন। আমীন।’
★ বিচারকের রায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা
১৯৬৫ সালের ২১ আগস্ট অবশেষে তাগুত সরকারের নামমাত্র বিচার-অনুষ্ঠান করে সামরিক ট্রাইবুনালের মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। বিচারক সাইয়েদ কুতুবের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার পর আদালতের নথিপত্র যারা লিখছিলেন তারা কাঁদছিলেন। অথচ সাইয়েদ ফাঁসির রায় শোনার পর ঈমানী তেজে তেজোদীপ্ত হয়ে খুশিমনে দৃপ্তকণ্ঠে বলেন, 'আলহামদুলিল্লাহ, শাহাদাতের জন্যেই তো আমি ১৫ বছর ধরে নিরলস কাজ করছি। সেদিন তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
‘আমার কাছে এটা কোনও বিষয়ই নয় যে, আমি কোথায় মরতে যাচ্ছি এবং কিভাবে জালেমরা আমার মৃত্যুদণ্ড দেবে। আমি তো এতেই সন্তুষ্ট যে, আমি আল্লাহর একজন অনুগত বান্দা হিসাবে শাহাদাতের পেয়ালা পান করতে যাচ্ছি।’
★ সাইয়েদ কুতুব রহ. সম্পর্কে আহমদ রায়েফের বক্তব্য
ইখওয়ানের নেতা আহমদ রায়েফ বলেন, একবার জেলখানার সেপাইরা আমাকে ও আমার অন্যান্য সঙ্গীকে কেন্টিন থেকে খাবার আনার দায়িত্ব দিল। রাস্তায় সাইয়েদ কুতুবের সাথে দেখা। বিরাট সুযোগ পেয়ে গেলাম। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হযরত! আপনি নাসেরীদের কাছ থেকে কি আশা করেন?’ সাইয়েদ আত্মবিশ্বাসের সাথে মুচকি হাসলেন । একান্ত অচঞ্চল, শান্তহৃদয় ও ধীরকণ্ঠে বললেন, ‘আমি আমার প্রতিপালকের দরবারে হাজির হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।
★ সাইয়েদ কুতুব রহ. কারাগার থেকে শেষ চিঠি তাঁর বন্ধুর নিকট
কারাগার থেকে বন্ধুর কাছে লেখা জীবনের শেষ চিঠিতে তিনি লিখেছেন— ‘আমি তো এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলাম। আমার জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত তো এটিই। আমি আকিদা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছি। দীনকে পুরোপুরি অনুধাবন করেছি, যা আগে কখনোই পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। এখন আছি শাহাদাতের অপেক্ষায়। এই জীবনের চেয়ে সুখকর জীবন আমি কখনো কাটাইনি।’
★সাইয়েদ কুতুব রহ. এর বোন হামীদা কুতুব এর বক্তব্য
সাইয়েদ কুতুবের বোন হামীদা কুতুব বলেছেন, ১৯৬৬ সালের ২৮ আগস্টে সাইয়েদ কুতুবের ফাঁসির ব্যাপারে বাদশাহ আব্দুন নাসের একমত হলো। তখন হামদী রাসূলী আমাকে তাঁর ফাঁসির নির্দেশনামা দেখিয়ে বলল, এখন আমাদের সামনে আর মাত্র একটি সুযোগ বাকি আছে। আমরা যদি একটু সচেষ্ট হই, তাহলে হয়তো তাকে রক্ষা করতে পারবো। কারণ, তার মৃত্যুর কারণে যে ক্ষতি হবে, তা শুধু মিসরের ক্ষতি নয়। বরং গোটা ইসলামী বিশ্বের ক্ষতি। তিনি যদি একটু বিনয়ভাব প্রকাশ করেন, তাহলে আমরা তার ফাঁসির হুকুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত করে দেব। তারপর ছয় মাস গেলে তার মুক্তির ব্যবস্থা করব। আসুন, তাড়াতাড়ি আসুন। হাতে সময় একেবারে কম।
তখন আমি আমার ভাই সাইয়েদ কুতুবের নিকট গেলাম। বললাম, যদি তুমি একটু বিনয়ভাব প্রকাশ করো তাহলে এরা ফাঁসির হুকুম মওকুফ করে দেবে। সাইয়েদ কুতুব তখন বললেন, শোনো হামীদা! আমি তাদের নিকট কোন কাজের ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করবো? আল্লাহর দীনের জন্য যে কাজ করেছি, সে কাজের অপারগতার কথা বলবো? আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য কাজ করতাম, তাহলে বিনয় ভাব প্রকাশ করতাম। কিন্তু আল্লাহর জন্য যা করেছি, তার জন্য এমন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারপর বললেন, হে হামীদা! যদি আমার আয়ু শেষ হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে এই ফাসির নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে। আর যদি আয়ু শেষ না হয়ে থাকে, তাহলে এ নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে না। কেউ তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। সুতরাং বিনয় প্রকাশের কারণে আমার আয়ু বৃদ্ধিও পাবে না, হ্রাসও পাবে না।
★ সাইয়েদ কুতুব রহ. এর ফাঁসির পূর্বের রাত
সাইয়েদ কুতুব রহ. শাহাদাতের রাতেই স্বপ্নে দেখেন— রাসুলুল্লাহ ﷺ একটি সাদা ঘোড়ায় আরোহন করে এসেছেন। ঘোড়া থেকে নেমেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে মুসাফাহা করলেন এবং বললেন, ‘আপনার শাহাদাত সুখকর হোক হে সাইয়েদ!’ আল্লাহু আকবর! কী পরিমাণ শাহাদাতের তামান্না থাকলে এরকম স্বপ্ন দেখা যায়!
★ফাসির মঞ্চে সাইয়েদ কুতুব রহ.
ফাঁসির মঞ্চে সাইয়েদ কুতুব রহ. -কে মুক্তির আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছিল যে, আপনি শরীয়ত বাস্তবায়নের আহ্বান করে যে ভুল করেছেন তা স্বীকার করুন। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর দীনের জন্য কাজ করে কোনও ভুল করিনি। তখন বলা হল, তাহলে প্রেসিডেন্টের দয়া ভিক্ষা করুন। তিনি বললেন, কেন আমি তার দয়া ভিক্ষা করব? যে রায় দেয়া হয়েছে তা যদি ন্যায়সঙ্গত হয়, তাহলে তো আমি ন্যায় ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট আছি। আর যদি তা অন্যায্য ও অন্যায় হয়ে থাকে, তবে বাতিলের কাছে করুণা ভিক্ষা চাইতে রাজি নই। তখন বলা হল, তাহলে অন্তত এমন কিছু লিখুন যাতে প্রেসিডেন্টের প্রতি স্বীকৃতি বোঝা যায়। তিনি বললেন, নামাজে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্যদানকারী আমার তর্জনীকে যদি এক খোদাদ্রোহী তাগুতের শাসনের স্বীকৃতি দিয়ে একটি শব্দও লিখতে বলা হয়, অবশ্যই সে তা প্রত্যাখ্যান করবে।
★ সাইয়েদ কুতুব রহ. ফাসি
১৯৬৬ সালের ২৯ আগস্ট ভোর রাতে সাইয়েদ কুতুব রহ. ফাসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসি কার্যকর করার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন পুলিশ অফিসার তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল, 'শহীদ কে?' উত্তরে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, 'যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহর শরীয়তের মূল্য তার জীবনের চেয়ে বেশি। মিশরের নিয়ম অনুযায়ী শহীদ সাইয়েদ কুতুব রহ.-কে ফাঁসি দেওয়ার জন্য যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন এক আজহারী শায়খ এসে তাঁকে বলল, তুমি বলো-আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। তখন সাইয়েদ কুতুব তাঁর দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত বেদনার্ত কণ্ঠে বললেন, অবশেষে আপনি এলেন এই নাটকের অবসান ঘটাতে! মনে রাখুন আমরা লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ এই কালিমাকে বিজয়ী করতে চাচ্ছি বলে আমাদের ফাঁসি দেয়া হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে। আর আপনারা লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ বিক্রি করে খাচ্ছেন, উদরপূর্তি করছেন। শুনে নিন, আমি বলছি- আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। এবং তিনি শাহাদাত বরণ করলেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
সাইয়েদ কুতুব রহ. বলতেন, ‘আমাদের কথা ও চিন্তাগুলো নিথর মৃতদেহের মতো পড়ে থাকবে। আমরা যদি আল্লাহর পথে জীবন দিতে পারি, শাহাদাতের রক্তে সিঞ্চিত হতে পারি, তবেই তা জীবিত হয়ে উঠবে এবং জীবিতদের মাঝে বেঁচে থাকবে। কবির এই পঙক্তিই যেন তাঁর জীবনে জ্বলন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে—
“জীবনের চেয়ে দীপ্ত মৃত্যু তখনি জানি,
শহীদি রক্তে হেসে ওঠে যবে জিন্দেগানী।”
✍ জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান
শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়
কায়রো, মিশর