
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাপে পড়ে তাদের ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের খেতাব পাওয়া জাতীয় পার্টিও। কারণ, শেখ হাসিনার পাতানো নির্বাচন যখন সব বড় দলগুলো বর্জন করেছে, তখন তারা ভোটে গিয়ে বিরোধী দল হয়েছে এবং কার্যত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ‘হাতের পুতুল’ হয়ে সংসদে থেকেছে।
ফলে গত বছরের ৫ আগস্টের পর অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নিলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির সঙ্গে দলটির দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতাদের বিচারের দাবিও উঠতে শুরু করে। বিক্ষিপ্ত ভাবে ওঠে তাদের নিষিদ্ধের দাবিও। পরে সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে জাপা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে জাপার জিএম কাদের-রওশন এরশাদরা। ফাইল ছবি।
তবে হঠাৎ করে আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের চাপে দলটি। এবারের চাপটা প্রবল, সঙ্গে পতিত আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে জোরেশোরে উঠেছে তাদের নিষিদ্ধের দাবি। রাজনীতির মাঠসহ সামাজিক মাধ্যমেও এ নিয়ে ব্যাপক শোরগোল।
এই দাবি আর আলোচনার মাঝেই শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। অভিযোগ ওঠে, দলবল নিয়ে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করতে গিয়েছিল গণঅধিকার পরিষদ। জাপার নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করতে গেলেই সংঘর্ষ শুরু হয়।
এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও যৌথবাহিনী ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এতে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর অবস্থায় নুর বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তিনি মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং নাকের হাড় ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই শনিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে আবারও জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির নেতাকর্মীরা ও গণঅধিকার পরিষদ। ভাঙচুর করা হয় জাপার কার্যালয়, দেওয়া হয় আগুন। এতে ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন জাপার মহাসচিব শামীম হোসেন পাটোয়ারসহ বেশ কয়েকজন নেতা।
এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এগিয়ে গেলে তাদের সঙ্গে হামলাকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ জলকামান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে হামলাকারীদের সরিয়ে দেয় এবং অবরুদ্ধ জাপা মহাসচিবসহ নেতাকর্মীদের উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসে। বর্তমানে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।