এফ.এম রিপন আহম্মেদ:
সাত বছরের ছোট্ট মেঘনার চোখে তখন ভয় আর বিভ্রান্তির ছাপ। জানালার ধারে বসে থাকা বাবার পাশে কিছুক্ষণ আগেও নিশ্চিন্তে বসে ছিল সে। কিন্তু যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তে বাস থামতেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে নামেন বাবা—আর ঠিক তখনই যাত্রীভর্তি এস কে স্পেশাল পরিবহন ছুটে চলে গন্তব্যের দিকে, মেঘনাকে রেখে যায় তার প্রিয় বাবাকে পেছনে।
২১ জুন ২০২৫, শনিবারের দুপুর তখন। রংপুরগামী এস কে স্পেশাল পরিবহনটিতে বসে চুপ করে আছে শিশু মেঘনা। কোথাও তার বাবা নেই। অচেনা সব মুখ, অজানা যাত্রা, আর বুকভরা উদ্বেগ। অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে সুপারভাইজার বিষয়টি বুঝতে পেরে মানবিকভাবে কাজ করেন—তাকে সরাসরি পৌঁছে দেন বগুড়ার শাজাহানপুর থানায়।
ডিউটি অফিসার এসআই তহুরা বেগম তখন দায়িত্বে। শিশুটির কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ খুলতেই মেলে একটি বই। আর সেই বইয়ের এক কোণায় লেখা থাকে একটি মোবাইল নম্বর—যেটি মেঘনার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের।
সেই এক টুকরো সূত্র ধরেই যোগাযোগ করা হয় উক্ত শিক্ষকের সঙ্গে। শিক্ষকটি দ্রুত খবর পৌঁছে দেন মেঘনার পরিবারের কাছে। আর এদিকে, বাবার যেন দিশেহারা অবস্থা—বাস থেকে নেমে ফিরে এসে দেখেন তার প্রাণপ্রিয় মেয়েটি আর নেই। খোঁজাখুঁজিতে ছুটেছেন থানা, রাস্তা, পরিবহন কাউন্টার—সব জায়গায়।
শেষমেশ খবর পেয়ে ছুটে আসেন শাজাহানপুর থানা। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পিতাকে দেখে নিশ্চিত হয় পুলিশ। প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে শিশুকন্যা মেঘনাকে তার বাবার কোলে ফিরিয়ে দেয় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা।
মেঘনার মুখে তখন হাসি। বাবার বুকে জড়িয়ে ধরে যেন সে আবার ফিরে পায় পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।
শুধু একটি নাম্বার আর পুলিশের মানবিক দৃষ্টি—এই দুটি মিলেই একটি পরিবার ফিরে পেল তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন।
এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, "এটি আমাদের জন্য দায়িত্বের অংশ হলেও শিশুটির মুখে হাসি ফোটাতে পেরে আমরা গর্বিত।"
মানবিক এই উদ্যোগ এখন এলাকায় প্রশংসার এক নতুন উদাহরণ হয়ে উঠেছে।