বর্তমান সময়ের ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। শহরের অলিগলি পেরিয়ে এখন গ্রামীণ এলাকাতেও বিস্তার ঘটেছে তাদের উৎপাত। বেপরোয়া ও সহিংস হয়ে ওঠা এসব গ্যাং সদস্যদের রুখতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশের সদস্য ও সাংবাদিকরাও হামলার শিকার হচ্ছেন।
সাম্প্রতিক এক ঘটনায়, বগুড়া শহরের কালীতলা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হন ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আহম্মদ আলী। গত ১৫ এপ্রিল রাতে দুর্ঘটনাকবলিত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করতে গিয়ে তারা বাধার মুখে পড়েন। একপর্যায়ে তাদের মারধর করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা এসে তাদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এর আগে, ৭ এপ্রিল শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত হন দুই সাংবাদিক—খোরশেদ আলম (দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ও মাছরাঙা টিভির প্রতিনিধি) ও আসাফুদৌলা নিওন (বগুড়া লাইভ)। তারা জানান, বিনা উস্কানিতে এই হামলার শিকার হয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শহরের অলিগলিতে কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়মিত আড্ডা ও বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনার ঘটনা অহরহ ঘটছে। অনেকের কাছে ধারালো অস্ত্রও দেখা যায়। তারা দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে, যেকোনো মুহূর্তে দ্বন্দ্বে জড়াতে প্রস্তুত থাকে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
গোটা জেলার বিভিন্ন উপজেলা—শাজাহানপুর, গাবতলী, শিবগঞ্জ, আদমদীঘি, সোনাতলা, শেরপুর, ধুনট, সারিয়াকান্দি, কাহালু ও নন্দীগ্রামেও কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু কিশোর নয়, অনেক যুবকও এসব গ্যাংয়ে যুক্ত রয়েছে।
জেলার বাসিন্দা ইবরাহীম হোসেন, বাবু মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, “পুলিশ যদি কঠোর হতো, তাহলে আজ এতটা বেপরোয়া হতো না কিশোর গ্যাং। এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রাস্তায় বের হলেও ভয় লাগে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান বলেন, “কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।”
জনগণের প্রত্যাশা, শুধুমাত্র অভিযানে সীমাবদ্ধ না থেকে এ সমস্যা সমাধানে সামাজিক উদ্যোগ, সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও হবে সময়ের দাবি।