বগুড়ায় কর্মরত বা এক সময় দায়িত্বে থাকা শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমিজমা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সম্পদের মালিকানা গোপন রাখা হয়েছে স্ত্রী, সন্তান বা আত্মীয়স্বজনের নামে। অথচ আইন বলছে, বাহিনীর অনুমতি ছাড়া নিজ জেলার বাইরে কোনো পুলিশ সদস্য স্থায়ী সম্পদ গড়তে পারেন না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়া শহরের লতিফপুর, চকলোকমান, গণ্ডগ্রাম, ফুলদিঘি, জলেশ্বরীতলা, রহমাননগর, মালতিনগর ও পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে পুলিশের বাড়ি ও ফ্ল্যাটের ছড়াছড়ি। অনেক পুলিশ সদস্য দীর্ঘ সময় ধরে বগুড়ায় অবস্থান করে ‘উপরি আয়’ থেকে এই সম্পদ গড়েছেন। একবার বদলি হয়ে এলেই ঘুরেফিরে জেলার এক থানায় থেকে আরেক থানায় বদলি হন তাঁরা। এভাবে গড়ে ওঠে অপরাধীচক্র ও বিত্তবানদের সঙ্গে সখ্য।
অনুসন্ধান বলছে, জমি বা ফ্ল্যাটের মালিক বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য হলেও তা করা হয়েছে পরিবারের সদস্যদের নামে। লতিফপুর কলোনিতে দেখা গেছে পাঁচতলা ভবন ‘ক্ষণিকের আশ্রয়’, যার মালিক একজন পুলিশ সদস্য। পাশেই রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত এসআই আব্দুর রহমানের বাড়ি। জলেশ্বরীতলায়, রহমাননগরে ও মালতিনগরে বহু বহুতল ভবনের পেছনেই রয়েছে পুলিশের সম্পৃক্ততা।
ঢাকায় কর্মরত অ্যাডিশনাল ডিআইজি শফিকুল ইসলাম সম্প্রতি লতিফপুরে ২৫ শতক জমির ওপর দোকান নির্মাণ করেছেন। অবসরে যাওয়া পরিদর্শক আব্দুল মান্নান মালতিনগরে জমি ও জেলখানা সড়কে ফ্ল্যাট কিনেছেন। এমন আরও বহু উদাহরণ রয়েছে।
পুলিশ প্রবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, নিজ জেলার বাইরে সম্পদ গড়তে চাইলে বাহিনীপ্রধানের পূর্বানুমতি লাগবে। তবে বগুড়ার এই বাস্তবতায় সেই নিয়ম কার্যত উপেক্ষিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাই নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের হাতে আইন থাকলেও তারা নিজেরা কি আইনের ঊর্ধ্বে?
বদলি ঠেকিয়ে দীর্ঘদিন এক এলাকায় থাকা পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, কেউ একবার বগুড়ায় বদলি হয়ে এলে আর ফিরে যেতে চান না। এখানে থেকেই ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ও অপরাধীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেন অনেকে। এই প্রক্রিয়াতেই গড়ে উঠেছে ‘অবৈধ সম্পদের জাল’।
সুশাসনের জন্য প্রচার অভিযান (সুপ্র) এর সাধারণ সম্পাদক কে জী এম ফারুক এবং সুজনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর তুহিন বলেন, “আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। এভাবে নিয়ম ভেঙে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের জন্য আলাদা সুবিধা তৈরি করছেন, যা রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। এর সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন।”
জেলা পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা গনমাধ্যমকে বলেন, “পুলিশ সদস্যদের বাড়ি ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রেও অনুমতি নেওয়ার বিধান রয়েছে। কেউ অনুমতি না নিয়ে বহুতল ভবন বা জমি কিনে থাকলে, সেসব বিষয়ে তথ্য নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। সূত্র: আমার দেশ