নিজস্ব প্রতিবেদক
বগুড়ার কাহালু উপজেলায় মিলন চন্দ্র বর্মন নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন তার স্ত্রী সুলেখা বিশ্বাস।
গত ১১ জুলাই বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি করা হয়। এই মামলায় মিলনসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, মিলনের ভাই যুগল চন্দ্র বর্মন ও যুগলের স্ত্রী রুপসী রানী। অভিযুক্ত সবাই বগুড়ার কাহালু উপজেলার উৎরা গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে মিলন কাহালুর বিনোদ কল্যাণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
অভিযোগকারী সুলেখার বাবার বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার দক্ষিণ বেজোড়া গ্রামে।
মামলায় বলা হয়েছে, মিলন যৌতুক লোভী ও পরকীয়ায় আসক্ত চরিত্রহীন এক ব্যক্তি। ২০২১ সালের ১১ মার্চ তার সঙ্গে সুলেখার বিয়ে হয়। ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। ওই সময় মিলনকে যৌতুক হিসেবে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সুলেখাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার। বিয়ের পর থেকেই পরকীয়ার আসক্ত নারীসহ অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতে শুরু করেন মিলন। এসব মেয়ের পেছনে যৌতুকের চার লাখ টাকাই খরচ করে ফেলেন তিনি। এমনকি একবার এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় স্থানীয়দের কাছে ধরাও পড়েন মিলন। ওই সময় গ্রাম্য সালিসে ক্ষমা প্রার্থনা করেন মিলন। এরপরেও তার চরিত্রের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এক পর্যায়ে ২০০৫ সালের ৩১ আগস্ট চাকরি থেকে মিলনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এসময় সুলেখাকে তার বাবার বাড়ি থেকে আরও ৩ লাখ টাকা যৌতুক আনতে বলেন মিলন। এবার যৌতুক দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন সুলেখা। এরপরই সুলেখার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন মিলন। এমনকি মিলনের মারধরে সুলেখার কানের পর্দা ফুটো হয়ে গেছে। বর্তমানে কানে কম শোনেন সুলেখা।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ জুলাই সকালে সুলেখাকে বেধড়ক মারধর করেন মিলন, যুগল ও রপসী। মারধরের শিকার হওয়ার পর সুলেখা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি হন। গত ৬ জুলাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দেন। এরপর থেকেই শাজাহানপুরের বেজোড়া এলাকায় তার ভাইদের বাড়ি বাড়ি অবস্থান করছেন তিনি। পরবর্তীতে গত ৮ জুলাই বেজোড়া গ্রামে আসেন সুলেখার স্বামী মিলন। ওই দিন তিনি সুলেখাসহ তার ভাইদের বলে যান যৌতুকের ৩ লাখ টাকা তাকে দিতে হবে। এই টাকা না পেলে সুলেখাকে নিয়ে সংসার করবেন না তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিলন চন্দ্র বর্মন বলেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
কাহালু থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মো. সেলিম রেজা জানান, মামলার কাগজ হাতে পেলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন জানান, বিনোদ কল্যাণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তার স্ত্রীর লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।