৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বগুড়ার ইতিহাসে ৩ মার্চ এক কলঙ্কময় অধ্যায়

spot_img

আজ ৩ মার্চ, ইতিহাসে এই দিনটি এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের নাম। ২০১৩ সালের এই দিনে বগুড়ায় হামলা, সংঘর্ষ, হত্যা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ নানা ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়।

জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে গুজব ছড়িয়ে, এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালায় জামায়াত-শিবির ও সাঈদী ভক্তরা।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এ রকম ধ্বংসযজ্ঞ বগুড়াবাসীসহ গোটা জাতি কখনো সপ্নেও দেখেনি।

জানা গেছে,৩ মার্চ ২০১৩ সালের সেই ভয়াবহ সেই দিন ভোর ৩টার দিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি অনুমান করে বগুড়ার সব থানা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির অনুরোধ জানিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সারোয়ার মাহমুদকে ফোন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সব থানা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। তা সত্ত্বেও জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে দেওয়া আদালতের আদেশের প্রতিবাদ জানিয়ে এতসব ধ্বংসযজ্ঞ চালায় জামায়াত-শিবিরসহ সাঈদী সমর্থকরা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে থানায় সব মিলিয়ে ৫৬ টি মামলা হয়। যাতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল এবং বাকি ৫১টি মামলায় ৮৪৩ জনকে গ্রেফতার করে ৩,১২০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

৩ মার্চ(রোববার) ভোর ৩টার দিক থেকেই চলে জামায়াত-শিবির ও সাঈদী ভক্তদের বে-আইনী কর্মকাণ্ড। মোবাইল ফোনে ক্ষুদ্র বার্তা (এসএমএস), ফোনসহ মসজিদে মাইকিং করে সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার গুজব ছড়ানো হয়।

এর মাধ্যমে উত্তেজিত করে তোলা হয় শিশু, কিশোর, নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে। বুঝে না বুঝে, ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বগুড়া জেলা শহরসহ শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, দুপচাচিয়া, শিবগঞ্জ ও গাবতলী উপজেলা শহরের রাস্তায় নামে লক্ষাধিক মানুষ।

এসময় তারা হামলা, সংঘর্ষ, হত্যা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ নানা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে সড়ক ও এর আশপাশের দোকান-পাঠ, অফিস-আদালতসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বেহাল দশা লক্ষ্য করা গেছে। দেখে মনে হয় বগুড়া ঠিক যেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশের অংশ বিশেষ। ইট, পাথর, গাছ, গাছের গুঁড়ি, ইলেকট্রিক পোল, সিমেন্টের খুঁটিসহ নানা ধরনের জিনিস ফেলে রেখে অচল করে দেওয়া হয় এই সড়কটিকে। এরই মাঝে বিভিন্ন বয়সের মানুষের লাশ ও রক্ত আতঙ্কিত করে তোলে সাধারণ মানুষকে। সেই দিনের পরিবেশ দেখলে যেকোনো মানুষের চোখে অঝোরে পানি এসে যাবার কথা।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেলপথ, পুলিশ ফাঁড়ি ও থানা থেকে শুরু করে ছোট-বড় উপজেলা পর্যায়ের এমন কোনো দপ্তর নেই, যেখানে আঘাত বা হামলা করে নি আন্দোলনরত জামায়াত-শিবির ও সাঈদী সমর্থকসহ সংশ্লিষ্টরা। হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, ইউএনও, গণমাধ্যম অফিসসহ সরকারের উন্নয়নমূলক ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ও এদের যানবাহন। আন্দোলনকারীরা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে রুগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাড়ি ও আসবাপপত্রসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্থাপনায়। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তৎকালীন পুলিশ সুপার।

শুধু তাই নয়, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা লুট করেছে এক শ্রেণির মানুষ। সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে ৩ নারীসহ ১৩ জন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেও গুরুতর আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন কমপক্ষে ১০ পুলিশ সদস্য। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও শাজাহানপুর থানাকে রক্ষা করতে সেনাবাহিনী ‍নামানোর হয়।

বগুড়ার সংশ্লিষ্ট থানাসূত্রে জানা গেছে, এই নৈরাজ্যের ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় এক হাজার জনের নাম উল্লেখ করে পৃথক ১২ মামলায় কমপক্ষে ৬ হাজার জন, দুপচাঁচিয়া থানায় ১১টি মামলায় দেড় হাজার জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত প্রায় দশ হাজার, শাজাহানপুরে ৯ মামলায় ৭২৩ জনের নাম উল্লেখসহ কমপক্ষে ২২ হাজার, নন্দীগ্রামে ৪ মামলায় কমপক্ষে ৭৫০ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় ১৫ হাজার, শিবগঞ্জ থানায় ৩ মামলায় ১১০ জনের নাম উল্লেখসহ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার এবং গাবতলী থানায় ৯ মামলায় কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা কমপক্ষে আড়াই হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা নথিভূক্ত হয়। প্রত্যেকটি থানায় একটি করে মামলার বাদি পুলিশ। আর বাকিগুলোর বাদি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

ওইদিনের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কোনো শ্রেণিপেশার মানুষ বাইরে বের হয়ে নিজের পরিচয় দিতে পারে নি। সাংবাদিক বুঝলেই তাকে মার খেতে হয়েছে। পুলিশ জানলেই তার উপর আক্রমণ হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তা জানলেই তাকে ঘেরাও করা হবে, এক কথায় সেদিনের সেই পরিস্থিতির কথা মনে হলে আজও আঁতকে ওঠেন বগুড়াবাসী।

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ