বগুড়া সদরের নিশিন্দারা এলাকায় অবস্থিত ২০ শয্যা বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল নিজেই এখন সর্দি–কাশিতে আক্রান্ত! জনবল সংকট, নিরাপত্তাহীনতা আর অব্যবস্থাপনায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই হাসপাতালটি। চারপাশজুড়ে জঙ্গল আর আগাছায় ঢেকে গেছে পুরো এলাকা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, এটি কোনো পরিত্যক্ত ভূতের বাড়ি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে প্রতিনিয়ত ঘোরাফেরা করছে শেয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণী। মেইন ফটকে নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় এলাকাটি বহিরাগতদের মাদকসেবনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দিনের বেশির ভাগ সময়ই এখানে মাদকসেবীদের আনাগোনা। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে আসর। এতে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, আতঙ্কে কাজ করছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। নিষেধ করলেই দেওয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি।
বগুড়ার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর কার্যক্রম রয়েছে দুই মেরুতে—একটি উপশহরের নিশিন্দারায়, আরেকটি শহরের দক্ষিণে ঠনঠনিয়ায়। দুই প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। এতে রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। ঠনঠনিয়ার ক্লিনিক থেকে ভর্তি অনুমতি নিয়ে আবার উপশহরের হাসপাতালে যেতে হয়। সেরে ওঠার পর ছাড়পত্রও নিতে হয় ক্লিনিক থেকেই।
১৯৬১ সালে ২০ শয্যার এই হাসপাতাল চালু হয়। ২১টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ১০টি শূন্য। দুইজন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন মাত্র একজন—ডা. আশরেফা আক্তার, যিনি মূলত কাহালু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। তিনি বলেন,
“সবসময় আতঙ্কে থাকি। মাদকসেবীদের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে নারী নার্সরা ভয় নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন।”
ফার্মাসিস্ট মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বহিরাগতদের আধিপত্যে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
১৩ বছর আগে নির্মিত এমডিআর ভবনটি এখনো হস্তান্তর হয়নি। চারপাশে জঙ্গল গজিয়েছে, ভবনটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ সেটি সচল হলে রোগীরা আরও উন্নত চিকিৎসা পেতেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রধান ফটকে একজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া এখন সময়ের দাবি। নইলে মাদকসেবীদের দখল থেকে হাসপাতালটিকে রক্ষা করা যাবে না।