৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৩ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভূমি সেবায় জনতার হৃদয় জয় করে বিদায় নিলেন শাহজাহানপুরের এসিল্যান্ড জান্নাতুল নাঈম

spot_img

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বদলি হয়েছেন জান্নাতুল নাঈম। তার বিদায়ে সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া—একদিকে কৃতজ্ঞতা, অন্যদিকে গভীর শূন্যতা।

৩৮তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা ২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল শাজাহানপুরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই ভূমি সেবায় নতুন গতি আসে। উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অফিসগুলোতে শৃঙ্খলা, সেবার মান বৃদ্ধি ও জনবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলেন তিনি।

ভূমি অফিস সূত্র জানায়, দায়িত্বকালীন সময়ে ৯,৬৯২টি নামজারি আবেদন নিষ্পত্তির জন্য জমা পড়ে। এর মধ্যে ৯,৩৩০টি নিষ্পত্তি করেছেন সততা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে। বর্তমানে ৩৬২টি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অবৈধভাবে মাটি কাটা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, বাজারমিস কেইসগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় নোটিশ, তদন্ত ও শুনানীর মাধ্যমের শতভাগ সচ্ছতা ও সততার সাথে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং পূর্বের মামলার জট কমিয়ে আনতে তার যোগদানের পূর্বের ২/৩ বছরের পুরোনো প্রায় সকল মামলা বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তি করা হয়েছে। মনিটরিংসহ বিভিন্ন অনিয়ম রোধে ৪৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন তিনি। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে দায়ের করেন ১৬টি নিয়মিত মামলা।

দাপ্তরিক কাজ ছাড়াও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, ভূমিহীনদের পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন জান্নাতুল নাঈম।

সেবা নিতে আসা খলিশাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব মাহমুদ বলেন, ‘নামজারির কাজ অল্প সময়েই হয়েছে। কোনো হয়রানি ছাড়াই সেবা পেয়েছি। এসিল্যান্ড স্যারের সেবাই আমি মুগ্ধ।’

জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি আরিফুর রহমান মিঠু বলেন, ‘তিনি ছিলেন একজন সৎ, সাহসী ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। সাংবাদিকদের সহযোগিতায়ও সবসময় এগিয়ে এসেছেন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক–সুজন শাজাহানপুর উপজেলা শাখার সভাপতি সাজেদুর রহমান সবুজ সংবাদ বুলেটিনকে জানান, বিদায়ী সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল নাইম একজন জনবান্ধব ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা ছিলেন। তার পেশাগত দক্ষতা ও আন্তরিকতায় উপজেলাবাসি কোন ভোগান্তি ছাড়াই ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেয়েছেন। এছাড়া বিগত এক বছরে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মাটি দস্যুতা, ভোক্তা অধিকার, পরিবেশ সুরক্ষাসহ নানা বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।’

স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারাও তার বিদায়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও খড়না ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই সিদ্দিকী রনি সংবাদ বুলেটিনকে বলেন, ‘সব শ্রেণির মানুষের জন্য ছিল তার দরজা খোলা। আমাদের খড়না ইউনিয়ন প্রশাসক হিসেবে সবোর্চ্চ সেবা ও কাজ করেছেন।’

শাজাহানপুর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নিজ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বাদী-বিবাদীর উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান করতেন তিনি। আমি তার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তার মঙ্গল করুন।’

ডোমুনপুকুর আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইসমাইল হোসেন সংবাদ বুলেটিনকে বলেন, ‘সদ্য বিদায়ী এসিল্যান্ড জান্নাতুল নাঈম ছিলেন একজন বিনয়ী, সৎ ও কর্মঠ কর্মকর্তা। দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে।’
জনসেবায় এক বছর একমাস সময়কালীন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জান্নাতুল নাঈম উপজেলাবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন, এমন মানবিক কর্মকর্তা দীর্ঘদিন থাকলে আরও ব্যাপক পরিবর্তন সম্ভব হতো।

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ