নিজস্ব প্রতিবেদক:
আমি তো ঠিকই আছি। সামান্য অসুস্থ হয়েছিলাম। একটু পর বাড়ির পথে রওনা দিবো। আপনারা কেন এসেছেন? কিছু কি হয়েছে?
হাসপাতালের বিছানায় বসে কথাগুলো বলছিলেন পারভীন আক্তার। একরাত পেরিয়ে গেলেও তাকে জানানো হয়নি তার এক সন্তান আর বেঁচে নেই। এরপরেও অজানা সংশয়ের চিহ্ন তার চোখে-মুখে। তাকে ঘিরে রেখেছেন স্বজনরা। কেউ যেন তাকে দিতে না পারেন মেয়ের মৃত্যুর খবর। তাই দেওয়া হচ্ছে তাকে পাহারা।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
তবে আর কতক্ষণ মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা যাবে সন্তানের মৃত্যুর খবর? মাকে জানানোর পর কি ঘটবে? হয়ত পরিস্থিতিই সামলে নিবে সবকিছু।
২৪ বছরের পারভীন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার বোনগাছি গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামীর নাম আব্দুল কাইয়ুম।
গতকাল সন্ধ্যায় স্যালাইন ও ট্যাংক মিশানো পানীয় পান করে পারভীনসহ তার পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় বাড়িতেই মারা যায় তার মেয়ে আড়াই বছরের জিমহা।
অসুস্থরা হলেন- পারভীনের স্বামী ২৭ বছরের কাইয়ুম, দুই মেয়ে ৭ বছরের নুশরাত জাহান নূরী ও ৮ বছরের রিয়ামনি। এছাড়াও অসুস্থ হয় তাদের স্বজন মিথিলা নামে আরেক শিশু।
পারভীন ও কাইয়ুম বলেন, গতকাল সোমবার আমরা রোযা রেখেছিলাম। সন্ধ্যায় ইফতারের আগে স্থানীয় শমেছপুর বাজারের এক মুদি দোকান থেকে দুটি করে ওরস্যালাইন ও টেস্টিস্যালাইন এবং একটি ট্যাংক কিনে আনি। ইফতারের সময় পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসব মেশানো পানীয় পান করি। কিছুক্ষণ পর আমরা ভাতও খাই। এরপরই সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি।
তারা আরও জানান, স্বজনরা তাদেরকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেন। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য শজিমেক হাসপাতালে আনা হয় তাদের।
কাইয়ুম বলেন, আমার ছোট মেয়ে জিমহা বাড়িতেই মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর পারভীনকে এখনো জানানো হয়নি।
বগুড়া ছিলিমপুর (মেডিকেল) পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই লালন হোসেন বলেন, অসুস্থরা এখন আশঙ্কামুক্ত। স্যালাইন ও ট্যাংক মেশানো পানীয় পান করার পর তারা ফুড পয়জনিং (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং পরজীবী দ্বারা সংক্রামিত) আক্রান্ত হয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে স্যালাইনগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল।