
এসবি নিউজ ডেস্ক : ‘রমজানের আগেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেমন বাড়তে শুরু করেছে, তাতে এবার না খেয়েই রোজা রাখতে হয় কি না সেটাই ভাবতেছি’, বাজারে ভোগ্যপণ্যের দামের ব্যাপারে রাজধানী ঢাকার শুক্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুর মোর্শেদ এভাবেই তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। মঞ্জুর মোর্শেদ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পাঁচজনের সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান।
মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘গত মাসে যেই পেঁয়াজ কিনছি ৯০ টাকা করে, আজকে (গতকাল) সেইটা কিনে আনলাম ১২৫ টাকা করে। চাল, ডাল, তেল, চিনি— সব জিনিসের দাম কেবল বেড়েই যাচ্ছে। তাহলে কীভাবে খেয়ে রোজা রাখব।
সাধারণত রজমানের শুরুতে বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই ভোগ্যপণ্যের বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। তবে এ বছর রমজান শুরু হওয়ার বেশ আগেভাগেই বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে- ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর ও পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এসময় দামও বেশ বেড়ে যায়।
অথচ রমজানে দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেজন্য গত জানুয়ারিতে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের আমদানি কর কমিয়েও দেয়া হয়। কিন্তু এরপর প্রায় তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও ভোক্তারা এর কোনো সুফল পাননি। উল্টো বাড়তে দেখা গেছে চিনি ও খেজুরের দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের মূল্য ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি ঋণপত্র (এলসি) খোলা নিয়ে নানা জটিলতার কারণে সার্বিকভাবে পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে পণ্যের দামেও সেটির প্রভাব দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও কিছু ‘অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ’ বাড়তি মুনাফা পেতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে পণ্যের সরবরাহ ও বাজার মনিটরিং ঠিক রাখতে না পারলে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের জন্য কঠিন হবে বলে মনে করছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
শুল্ক কমানোর পরও মূল্যবৃদ্ধি: বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে প্রতি বছরই রমজান মাসে চিনি, খেজুর ও ভোজ্য তেলের দাম বাড়তে দেখা যায়। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের বাজারে ইতিমধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসেরই দাম বেড়ে গেছে। ফলে রমজান উপলক্ষ্যে যেন নতুন করে এসব পণ্যের দাম আর না বাড়ে, সেজন্য চলতি মাসের শুরুতে চাল, ভোজ্য তেল, চিনি ও খেজুরের আমদানি কর কমিয়ে দেয় সরকার।
এর মধ্যে চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। এছাড়া রোজার অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। একইভাবে, ভোজ্য তেল ও চিনি আমদানিতেও কর কমিয়ে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য মতে, রমজান উপলক্ষ্যে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম তেল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ের ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম গড়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। এছাড়া অপরিশোধিত চিনি আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক দেড় হাজার টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। আর পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক তিন হাজার টাকা থেকে কমিয়ে করা হয়েছে দুই হাজার টাকা।
অন্যদিকে, গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম গড়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। এছাড়া ছোলার দাম পাঁচ শতাংশ, ডালের দাম দুই শতাংশ, শুকনা মরিচের দাম পাঁচ শতাংশ, হলুদের দাম চার শতাংশ, দারুচিনির দাম পাঁচ শতাংশ এবং তেজপাতার দাম কেজিতে গড়ে প্রায় তিন শতাংশ বেড়ে গেছে।
বেসরকারি হিসেবে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। বিপুল এ চাহিদার বেশিরভাগই পূরণ করা হয় আমদানির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ-সহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।