৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সুনামগঞ্জ শহরের ‘ইয়াবার দুর্গ’ অবশেষে উন্মোচিত

spot_img

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জ শহরের বড়পাড়া এলাকার একটি রহস্যঘেরা দুইতলা ভবন ঘিরে দুই বছর ধরে স্থানীয়দের মনে নানা প্রশ্ন জাগছিল।

গত বুধবার রাতে ডিবি পুলিশের অভিযানেই ফাঁস হলো আসল চিত্র-বাড়িটি ছিল একটি সংগঠিত ইয়াবা চক্রের গোপন কার্যালয়।

এসময় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল ওই বাড়িটি ঘেরাও করে তল্লাশি চালায়। এর আগে সন্ধ্যায় শহরের দক্ষিণ আরপিননগর এলাকা থেকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় মূল হোতা আসাদুজ্জামান পংকজ (৩৫) এবং তার দুই সহযোগী-লিমন মিয়া (৩২) ও মো. শ্রাবনুজ্জামান (৩৪)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৫০ পিস ইয়াবা।

আসাদুজ্জামান পংকজ একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, যার বিরুদ্ধে মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ অন্তত ১৮টি মামলা রয়েছে। পুলিশ জানায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ শহরে একটি সুসংগঠিত মাদক নেটওয়ার্ক চালিয়ে আসছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মানিক ডাত্তা পয়েন্টের নিকট অবস্থিত এই দুইতলা ভবনটি পংকজ প্রায় দুই বছর আগে ১৮ লাখ টাকায় ক্রয় করেন। এরপর থেকেই এটি পরিণত হয় ইয়াবা ব্যবসার নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। বাড়িটির মূল ফটক সারাদিন তালাবদ্ধ থাকত। সন্ধ্যার পরপরই সেখানে দেখা যেত বিভিন্ন যানবাহনে আগত অপরিচিত মানুষের ভিড়। ক্রেতারা ফোনে যোগাযোগ করলে গেট খোলা হতো। অভ্যন্তরে ছিল আলাদা একটি ‘ভিআইপি আড্ডা কক্ষ’, যার চারপাশে সোফা আর মাঝখানে ঝুলানো দোলনা। উপরতলার একটি অংশে চলত গোপন মাদক সেবন কার্যক্রম।

বিশেষভাবে নকশাকৃত এই বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রবেশ ঠেকাতে ছিল নানা ব্যবস্থা। গেট ভাঙা ছাড়া প্রবেশের উপায় ছিল না এবং পালানোর জন্য পেছন দিকে ছিল বিকল্প সুরঙ্গপথ।

মহল্লাবাসীর ধারণা ছিল, এই বাড়ি থেকেই ইয়াবা বিক্রি হয়। কিন্তু ভয়, শঙ্কা ও হুমকির কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। এক প্রতিবেশী জানান, তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকেই পংকজ বাড়িটি কিনেছিলেন। সবার জানা ছিল, তিনি একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আহম্মদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, “আমরা নির্ভরযোগ্য সোর্সের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁদ পাতি। বিকেলে পংকজ ও তার সহযোগীদের আটক করার পর রাতেই বড়পাড়ার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। যদিও বাড়ির ভেতরে তখন কাউকে পাওয়া যায়নি, তবে এটি যে ইয়াবা ব্যবসার কেন্দ্রস্থল ছিল, সেটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।”

গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে সুনামগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাদেরকে জেল হেফাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ