৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৩ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

হারাম এবং মাদক ব্যবসা: ইসলামে এর ভয়াবহতা

spot_img

হারাম এবং মাদক ব্যবসা: ইসলামে এর ভয়াবহতা

 

ইসলাম মানবজাতির কল্যাণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এ ধর্ম মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য নির্দিষ্ট বিধান প্রদান করে। এক্ষেত্রে মাদক সেবন এবং মাদক ব্যবসা এমন দুটি কার্যকলাপ যা ইসলামের দৃষ্টিতে একেবারে নিষিদ্ধ এবং হারাম। মাদক, যা একদিকে মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে, অন্যদিকে তা তার আত্মিক ও সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, ইসলামে এর ভয়াবহতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন,
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।( সূরা আল-মায়েদা ৯০)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, মদ, জুয়া এবং অন্যান্য মাদক দ্রব্য মানুষের জন্য ক্ষতিকর এবং এগুলোর সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হওয়া উচিত নয়। এসব কিছুই শয়তানের অপকর্ম, যা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে এবং মানুষের আত্মিক উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ইসলামের দৃষ্টিতে, মাদক সেবন শুধু শারীরিকভাবে ক্ষতিকর নয়, এটি মানুষের মন ও চিন্তা শক্তিকে অস্পষ্ট করে ফেলে, যার ফলে সে আল্লাহর পথে চলতে ব্যর্থ হয়।

এ সম্পর্কে কুরআনের আরেকটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“এবং নিজেদের হাতে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়ো না।”(সূরা আল-বাকারাহ ১৯৫)

মাদক সেবন, যা মানুষের শরীর এবং মস্তিষ্কের ক্ষতি করে, তা এক ধরনের আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হতে পারে। ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এবং মাদক সেবন এমন এক গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া, যা মানব জীবনের প্রতি অবহেলা এবং আত্মঘাতী প্রবণতা সৃষ্টি করে।

রাসূলুল্লাহ সা. হাদিসে বলেছেন:
“মদ সব ধরনের পাপের মা, এবং যে ব্যক্তি মদ্যপান করবে, তার নাম আল্লাহর কাছে তালিকাভুক্ত হবে না।” (সাহীহ মুসলিম)

এখানে রাসূল (সা.) মদ্যপান এবং মাদক সেবনকে এমন একটি পাপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন যা আল্লাহর রহমত থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মাদক সেবন শুধু শারীরিক ক্ষতি করে না, বরং এটি একজন মানুষকে তার ধর্মীয় এবং নৈতিক দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত করে। মাদক সেবনকারী নিজের আত্মিক শক্তিকে দুর্বল করে, এবং এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করে যেখানে সে তার বাস্তবিক দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।

তদুপরি, “মদ্যপান ও মাদক সেবন পাপের পথ, এবং যে ব্যক্তি মাদক সেবন করবে সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে।” (সাহীহ বুখারি)

এটি মাদক সেবনের ভয়াবহ পরিণতির এক অশনি সংকেত। ইসলামে মাদক সেবন এমন এক কাজ, যা একদিকে মানবজাতির কল্যাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, অন্যদিকে ব্যক্তির আত্মিক ও শারীরিক জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। মাদক ব্যবসা, যা এই পাপের বিস্তার ঘটায়, ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় অপরাধ। এটি শুধু এক ব্যক্তির জীবন ধ্বংস করে না, বরং পুরো সমাজের শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে।

এছাড়া, ইসলাম যে শুধু মাদক সেবনকে নিষিদ্ধ করেছে তা নয়, এটি সেই সব ব্যবসার ক্ষেত্রেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যেগুলি মানুষের শরীর ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। মাদক ব্যবসা, যা মাদক সেবনের উৎস, তা কেবল সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়ায় না, বরং একসময় তা রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করে তোলে। সমাজের সুস্থতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে মাদক ব্যবসা এবং মাদক সেবন থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি।

ইসলামে শান্তি ও কল্যাণের ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং মাদক সেবন বা মাদক ব্যবসা এই শান্তির পথে এক বিশাল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কুরআন ও হাদিসের দলিলগুলো স্পষ্টভাবে এটি প্রতিপাদন করে যে, মাদক সেবন এবং মাদক ব্যবসা মানব সমাজের জন্য এক অব্যাহত বিপর্যয়ের কারণ, যা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনের নয়, পুরো সমাজের শান্তি এবং সুস্থতার জন্য এক অশনিসংকেত।

✍লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান
লেখক, শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো মিশর

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ