৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

হৃদয়ে ধারণ করা তাহারই স্মৃতি

spot_img

যখন শরিত্রীর বুকে মানুষগুলো ছিল অজ্ঞতা ও বর্বরতার নিকষ কালো তিমিরে নিমজ্জিত। মানবতার আলো ছিল নিভু নিভু। হিংস্রতা, উগ্রতা ও পাশবিকতা সর্বত্র বিরাজিত ছিল মধ্যগগনে ক্রুদ্ধ সূর্যের ন্যায় তেজদীপ্ত। অন্যায়, অনাচার ও অন্ধকার কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মানব অবয়বী মানুষগুলো ছিল পশুত্বের জঞ্জালে আবদ্ধ। সময়ে বিরাজিত ছিল হত্যা, লুণ্ঠন, খুনখারাবিসহ পাশবিকতার সকল নিকৃষ্ট দৃশ্যসমূহ। অশান্তি অরাজকতার অশুভ কালো ছায়ায় ছেয়ে গিয়েছিল মূর্খ বর্বর আরব সমাজ। জন্মদাতা পিতা নিজ হাতে আপন কন্যাকে করত জীবন্ত কবরস্থ। অসহায় নিঃস্ব নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানবতার বুকফাটা আর্তনাদ শোনার মতো ছিল না কোনে মানবহৃদয়। ঠিক তখন! জাহেলিয়্যাতের অতলে হারিয়ে যাওয়া অমানবিকতার চূড়ান্তসীমায় উপনিত নিরক্ষর সেই জাহেলী সমাজে আবির্ভাব ঘটল এক মহামানবের। ঊষর আরব হয়ে উঠল সবুজ সজীব। ধুসরমরুতে প্রাণের সঞ্চার হলো। সেই মহামানব গাইলেন মানবতার জয়গান। চারিদিকে তুললেন শান্তির শ্লোগান। নীরব ভাবে ঘটতে লাগল শান্তির বিপ্লব। মানবকুল তাঁর শান্তিকামিতা দেখে মন্ত্রমুগ্ধ। তিনি তার সততা, বিশ্বস্ততা, অমায়িক আচরণ, সুন্দর ব্যবহার, কোমলবচন, বিনয়ী স্বভাব ও মুচকী হাসির গুণে সকলের কাছে হয়ে উঠলেন অতি প্রিয়তম। একটা সময় তার কাছে আসল আসমানী প্রত্যাদেশ। আল্লাহপ্রদত্ত নবুয়তী শাশ্বত সম্মান। প্রাপ্ত হলেন শাশ্বত ঐশী পয়গাম। চিরন্তন কুরআন। তিনি এ আলো ছড়িয়ে দিলেন পুরো জগত জুড়ে। চতুর্দিকে ধ্বনিত হতে লাগল ওহীর প্রতিধ্বনি। তিনি ভেঙে দিলেন মূর্খ আরবের অন্ধকার রাজত্ব। গুড়িয়ে দিলেন হাতে বানানো পুতুল মুর্তিগুলো। মুখ থুবড়ে ধুলোয় লুটিয়ে পড়ল মুশরিকদের বানানো সব মিথ্যা উপাস্যগুলো। চুরমার হয়ে ধুলোয় মিশে গেল শিরকের মিথ্যা প্রাসাদ। উপরে ফেললেন অজ্ঞতার শত জঞ্জাল। নিরক্ষরতার আঁধারে ডোবা মানুষগুলোর ভাগ্যাকাশে তিনি এঁকে দিলেন সৌভাগ্যের পরশ রেখা। নবুওয়াতী আলোর পরশে মাটির মানুষগুলো পরিণত হলো এক একটি মূল্যবান হিরকখণ্ডে। অমূল্য পরশপাথরে যাঁর আগমনের খবর কাফেরদের বুকে শেল হয়ে বিধেছিল, বজ্রাহত দেহের পিঞ্জিরা গুলো বেদনার তীব্র দহনে কুকড়ে মরছিল, সেই ঘোর দুশমনরাই তাঁর সততায় গুণমুগ্ধ হয়ে তাঁকে ভূষিত করল আল-আমিন উপাধিতে!! তাঁর স্নিগ্ধকোমল মায়াবী চাহনীতে কঠিন হৃদয়গুলোও হয়ে যেত মোমের মতো সিক্ত বিগলিত। তাঁর আলতো পরশে পাথরতুল্য কঠিন হৃদয়গুলো তুলোর মত নরম হয়ে যেত। ঘাতক এসে ফিরে যেত ভক্ত অনুরক্ত সমর্থক হয়ে। তাঁর স্নিগ্ধ পরশ যে একবার পেয়েছে সেই হয়েছে ধন্য।

অনন্য সর্বজনমান্য বরেণ্য। নিকষ কালো আঁধার তাঁর পরশে হয়ে যেত উজ্জ্বল আলোকিত, মৃত প্রাণ হত জীবিত। অস্থির অশান্ত তৃষ্ণার্ত প্রাণ হত শীতল প্রশান্ত! তাঁকে একবার যে দেখেছে, কখনো ভুলেনি। তাঁর মতো কেউ কখনো দেখেনি। যেমন অতুলনীয় চেহারা, অপূর্ব ব্যবহার সুকোমল আচরণ সাথে গাম্ভীর্য পূর্ণ প্রভাবময়ী ব্যক্তিত্ব। বিনয়ের সাথে গাম্ভীর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অপূর্ব সমাহার ছিল তাঁর মাঝে। যখন মুখ খুলতেন যেন মধু ঝরত। মুক্তো দানার মতো মনে হত প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য। তার সহচরগণ চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে থাকত তাঁর দীপ্তিময় নূরানী উজ্জ্বল মুখাবয়বের দিকে। তাদের কান উৎকর্ণ থাকত প্রতিটিক্ষণ তাঁর ঘটেছিল

মুখনিসৃত অমীয় বাণী শোনার জন্য। সেই মহামানবের যখন আবির্ভাব সেদিন আনন্দের এক হিল্লোল বয়ে গিয়েছিলো গোটা জগত জুড়ে। প্রকৃতির মাঝে সাড়া পড়ে গিয়েছিলো। আকাশে বাতাসে প্রকৃতির প্রতিটি পরিবেশে। আনন্দের সাড়া, প্রিয় নবীর আগমনে নেচে উঠেছিলো বাগানের ফুলগুলো। হেসে উঠেছিল চাঁদ সূর্য গ্রহ-তারা সৃষ্টিকুলের প্রতিটি অস্তিত্ব। যতদিন চাঁদ আকাশে জ্যোৎস্না ছড়াবে, সূর্য আলোর তাপ বিলাবে, যতদিন সাগরে জলের সমারোহ থাকবে, প্রকৃতির মাঝে সজীবতা থাকবে ততদিন বর্ষিত হোক প্রিয়নবী সা. এর প্রতি অগণিত দরুদ সালাম। এই অধম উম্মতের পক্ষ হতে আল্লাহর করুণায় অবিরল ধারায়।

اللهم صل على محمد ﷺ وبارك على آله وصحبه ورحم جميع الأنبياء والمرسلين.

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়
কায়রো, মিশর

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ