আগামী অর্থবছরে মোবাইল সেবা ব্যবহারের ওপর যে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং সিম সংযোগের ওপর ১০০ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মুসক) আরোপ করা হয়েছে তার ফলে মোবাইল গ্রাহক এবং এই শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সিম সংযোগের ওপর প্রদেয় ভ্যাট ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করার কারণে মোবাইল গ্রাহকের প্রবৃদ্ধি অনেক কমে যাবে। এর আগে এ ধরনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেবার মূল্য বাড়ানো হলে গ্রাহকরা মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে দেয়; ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন রাজস্ব আহরণ কমে যায় অপরদিকে সরকারের কোষাগারেও প্রদেয় অর্থের পরিমাণ হ্রাস পায়।
বুধবার (১২ জুন) দুপুরে অ্যাসোসিয়েশন অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অফ বাংলাদেশের (এমটব) বনানীর অফিসে আয়োজিত এক সম্মেলনে অপারেটরের প্রতিনিধিরা সদ্য প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনাকালে এসব আশঙ্কার কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নেন বাংলালিংক ডিজিটালের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, রবি আজিয়াটার চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হ্যান্স মার্টিন হেনরিক্সন এবং এমটব মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার (অব)।
তারা বলেন, মোবাইল খাতের নতুন করে করারোপ না করে তাকে যৌক্তিক অবস্থায় আনতে এনবিআরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকাররের কাছে বার বার অনুরোধ করা হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এবার যেভাবে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে তাতে অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলে আমরা মনে করি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য আনুযায়ী, দেশে ১৯ কোটি ২২ লাখ সিমকার্ডধারীর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন ১২ কোটির বেশি গ্রাহক। বর্তমানে দৈনিন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইন্টারনেট।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম থেকে শুরু করে পড়াশোনা, কেনাকাটা, দাপ্তরিক কার্জকম- সব ক্ষেত্রেই বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহার। অথচ স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এখনও টেলিকম সেবার বাইরে রয়েছে দেশের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী। গ্রাহক পর্যায়ে ডাটা ব্যবহারেও আমরা আমাদের প্রতিবেশি দেশের তুলানায় কয়েকগুণ পিছিয়ে রয়েছি। তবে এ খাতে গ্রাহক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব বৃদ্ধির বিশাল সুযোগ রয়েছে।
অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ যখন বিশ্ব দরবারে ডিজিটাল সেবা প্রদানে প্রশংসিত হচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে নতুন করে গ্রাহকদের ওপর আরও করের বোঝা বৃদ্ধি করা হলো। ফলে ১০০ টাকার মোবাইল সেবা ব্যবহারে গ্রাহকদের সর্বমোট কর দিতে হবে ৩৯ টাকা; যা হবে সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবোর্চ্চ।
বর্তমানে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল মিলিয়ে একজন মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক মাসে গড়ে সাড়ে ৬ জিবি ডাটা ব্যবহার করেন। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মাসে গ্রাহক ব্যবহার করে ২৭-২৯ জিবি। বাংলাদেশের গ্রাহকরা ভারতের তুলনায় ডাটা ব্যবহারে কয়েকগুণ পিছিয়ে আছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গ্রাহক পর্যায়ের মোবাইল ইন্টারনেট সেবার কর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মালেশিয়ায় ৬ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৭ শতাংশ, নাইজেরিয়া ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ৯ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ১১ শতাংশ, ফিলিপাইন ১২ শতাংশ, ক্যাম্বোডিয়া ১৩ শতাংশ, ভারত ১৮ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপাল ২৬ দশমিক ২ শতাংশ, বাংলাদেশ ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং পাকিস্তান ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ কর আরোপিত রয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এখনও টেলিকম সেবার বাইরে রয়েছে দেশের ৪২ শতাংশ জনগোষ্ঠী। বর্তমান মোবাইল সেবা ব্যবহারকারীদের ৬৩ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং ৫৪ শতাংশ ফোরজি গ্রাহক। অর্থাৎ বর্তমান মোবাইল সেবা ব্যবহারকারীদের মধ্যেও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ (৩৭%) এখনও মোবাইল ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করতে পারছে না এবং ফোরজি সেবা (৪৬%) ব্যবহারের সক্ষমতাও অর্জন করতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সম্পূরক শুল্ক পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব মিলবে। তবে করের পরিবর্তে ডাটা ব্যবহার বাড়িয়েও এই পরিমান রাজস্ব আদায় সম্ভব। কিন্তু করনীতি স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের বিপরীত দিকেই হাঁটছে।