
আজ ৮ জিলহজ পবিত্র হজের প্রথম দিন। সারা বিশ্বের লাখো মুসলিমের তাওহিদের মহান শ্লোগানে মুখরিত হচ্ছে মিনা প্রান্তর। এই দিনটি ‘ইয়াওমুত তারবিয়াহ’ নামে পরিচিত। রাসুলুল্লাহ (স.) এবং সাহাবায়ে কেরাম এ দিনে মিনায় অবস্থান করতেন এবং হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করতেন। আজ সেই সুন্নাহ অনুসরণ করেই হাজিরা মক্কা থেকে মিনার দিকে রওনা হয়েছেন।
মিনায় অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত
মিনা মক্কা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হাজিরা মিনায় গিয়ে ইহরামের নিয়ম বজায় রেখে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন এবং সেখানে রাত যাপন করেন।
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, ‘তারবিয়াহ দিবসে রাসুল (স.) মিনার দিকে রওনা দিলেন এবং সেখানে গিয়ে জোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ আদায় করেন।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৮/৪৭৮, হাদিস: ১৪৭৫৫; সহিহ মুসলিম: ১/৩৯৬)
মিনায় যেসব আমল করবেন হাজিরা
১. ইহরাম ও নিয়ত
হজের ইহরাম বেঁধে ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইক হাজ্জান বা লাব্বাইক হজ্জান’ বলে নিয়ত করা।
ইহরামের বিধিনিষেধ পালন করা।
২. নামাজ আদায়
মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
জোহর, আছর ও এশা নামাজ কসর করে দুই রাকআত করে আদায় করা, যা রাসুল (স.)-এর সুন্নাহ।
৩. জিকির, দোয়া ও তাসবিহ
কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, তাকবির, তাহলিল ও তাসবিহে মগ্ন থাকা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা নির্ধারিত কয়দিনে আল্লাহর নাম স্মরণ করবে…’ (সুরা হজ: ২৮)
৪. রাত যাপন
মিনায় রাত যাপন করা রাসুলুল্লাহ (স.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল ছিল। এই দিনে জোহর থেকে ৯ তারিখ সকাল পর্যন্ত পুরো সময় একনাগাড়ে মিনায় অবস্থান করা মোস্তাহাব। (গুনইয়াতুন নাসিক: ১৪৬; রদ্দুল মুহতার: ২/৫০৩; ফতোয়া খানিয়া: ১/২৯৩; আততাজরিদ: ৪/১৯৫৭; আলইখতিয়ার ১/১৬০)
উল্লেখ্য, হজের অন্যতম বিধান শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার আমলটিও মিনাতেই পালন করা হয়। তবে তা ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ পালন করতে হয়।
আগামীকাল আরাফাহ: হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন
৯ জিলহজ হাজিরা আরাফাতে যাবেন, যেখানে অবস্থান করা হজের ফরজ রোকন। সেদিন ‘হজের খুতবা’ দেওয়া হবে এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান শেষে হাজিরা রওনা হবেন মুজদালিফার দিকে। এরপর মুজদালিফায় রাতযাপন এবং জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানিসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করবেন হাজিরা। জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে ১২ জিলহজ শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।
মিনা থেকে শুরু হলো পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। লাখো মুসলিমের কণ্ঠে লাব্বাইক ধ্বনি গর্জে উঠছে আকাশ-বাতাসে। এ হজ যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে ওঠে আত্মশুদ্ধির বাস্তব রূপ, সেদিকেই তাকিয়ে মুসলিম উম্মাহ।
আল্লাহ তাআলা হাজিদের হজ কবুল করুন, তাদের হজকে করুন মাবরুর। আমিন।