৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বসনবুড়ি মেলা বন্ধ, কামাড়পাড়া হাটে অতিরিক্ত খাজনা আতঙ্ক

spot_img

দুই শতাধিক বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বসনবুড়ি মেলা বিলুপ্তির পথে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও কালের পরিক্রমায় এখন এটি শুধু স্মৃতির অংশ। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চোপিনগর ইউনিয়নের বড়পাথার গ্রামে বহু বছর ধরে মেলাটি পালন করে আসছিলেন স্থানীয় মুসলমানরা।

প্রতিবছর শ্রাবণ মাসের একটি নির্দিষ্ট রোববার এই মেলার আয়োজন হতো। মেলাটিতে পূজা না থাকলেও দেড় শতাধিক গরু ও মহিষ জবাই হতো। বিক্রি হতো মিষ্টি, খেলনা ও গ্রামীণ বিনোদনের নানা সামগ্রী। এ কারণে স্থানীয়দের কাছে মেলাটি ‘মহিষের মেলা’ নামেই পরিচিত।

চলতি বছর মেলাটি ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, একই দিন কামারপাড়া হাট বসে। ওই হাটকে ঘিরেই মেলার আয়োজন সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় এই অভিযোগ করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, বড়পাথার গ্রামে এখন আর কোনো হিন্দু বসবাস করে না এবং মেলায় পূজাও হয় না। তাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগটি ভিত্তিহীন।

মেলাস্থল বড়পাথারে না হয়ে বর্তমানে আয়োজন চলছে কামারপাড়া হাটে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মিষ্টির দোকান, শিশুদের খেলনা ও গরু-মহিষ জবাইয়ের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। তবে হাটে অংশ নিতে আসা অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত খাজনার আশঙ্কা করছেন।

মিষ্টি ব্যবসায়ী মেজাবুল আলম জানান, বড়পাথারে এক মেলায় ১০ লাখ টাকার বেশি মিষ্টি বিক্রি করেছি। এবারও ভালো বিক্রির আশা করছি।” আরেক ব্যবসায়ী বাবু জানান, “রোববারের হাটে সাত লাখ টাকার বেশি বিক্রির লক্ষ্য আছে।

কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, হাটের ইজারাদার পক্ষের লোকজন শনিবার রাতেই তাদের ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খাজনা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে হাট ইজারাদার এইচ এম শফিক বলেন, হাটের ১৪ আনা শেয়ার বিক্রি করেছি। যাঁরা কিনেছেন, শুনেছি তাঁরা অতিরিক্ত খাজনার চেষ্টা করছেন। এটা দুঃখজনক।

অভিযোগকারী ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর রহমান বলেন, মেলার পাশে মসজিদ, ঈদগাহ ও মাদ্রাসা রয়েছে। হিন্দুরা না থাকায় এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগায় মেলার বিরোধিতা করেছি।

তবে চোপিনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এমরান হোসেন বলেন, বসনবুড়ি মেলা শাজাহানপুরের সংস্কৃতির অংশ। বহু বছর ধরে এটি মুসলমানদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়টি এখানে প্রযোজ্য নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাইফুর রহমান বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার শঙ্কায় মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীদের কোনো হয়রানি হলে থানা বা প্রশাসনকে জানালেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে।

 

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ