৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আ.লীগের ভোট ডাকাতি ও গণহত্যার দায় স্বীকার  

spot_img

এ সময় তিনি গণহত্যার শিকার প্রত্যেক পরিবার ও আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি কীভাবে সংঘঠিত হয়েছিল, সে কথাও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দি দেন। এ মামলার রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক এই আইজিপি।

জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাসহ ব্যাপক নৃসংশতার জন্য তিনি অপরাধবোধ এবং বিবেকের তাড়নায় নিজ থেকে অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান। গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আসামি হিসেবে তিনিও রয়েছেন। রাজসাক্ষী হিসেবে এ মামলার তিনি ৩৬তম সাক্ষীর জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালকে বলেন, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলন দমন সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হয়েছিল। র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন-অর রশীদ হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলন দমনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাকে ফোন করে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে লেথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশের কথা সদর দপ্তরে উপস্থিত অতিরিক্ত আইজিপি প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে জানালে তিনি ডিএমপি কমিশনারসহ সারা দেশে ওই নির্দেশনা পৌঁছে দেন।

আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার করার প্রস্তাব দেয় ডিজিএফআই। আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে রাজি হই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ডিবি ও ডিজিএফআই তাদের আটক করে।

জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় কোর কমিটির বৈঠক বসত। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পুলিশ বাহিনীতে রাজনৈতিক মেরূকরণ হয় এবং গোপালগঞ্জকেন্দ্রিক বলয় তৈরি হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় আমি ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ছিলাম। তখন আইজিপি ছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী।

আমি জানতে পারি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ৫০ শতাংশ ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি ও দলীয় নেতাকর্মীরা সরকারের পক্ষে কাজ করেন। যেসব পুলিশ অফিসার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন, তাদের বিপিএম, পিপিএম পদক দেওয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব আরো বৃদ্ধি পায়।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পূর্ণাঙ্গ জবানবন্দি

জবানবন্দিতে দেওয়া রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পুরো বক্তব্য এখানে তুলো ধরা হলো। তিনি বলেন, ‘আমি সাবেক আইজিপি। বর্তমানে অবসরে। এ মামলার আসামি হিসেবে জেলহাজতে আছি। আমি ১৯৮৬ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৮৯ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দিই। আইজিপি হওয়ার আগে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, সিআইডির প্রধান, র‍্যাবের মহাপরিচালক এবং সর্বশেষ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।’

চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আমাকে এ মামলায় গ্রেপ্তারের পর স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক হলে গত ২৪ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের কাছে পাঠালে আমি সেদিনই তার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিই। এই সেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। জবানবন্দির প্রতি পৃষ্ঠায় আমার স্বাক্ষর আছে। এগুলো আমার স্বাক্ষর। পরবর্তীকালে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের পর আমি দোষ স্বীকার করে পুর্ণাঙ্গ সত্য প্রকাশের অঙ্গীকার করে অ্যাপ্রুভার হওয়ার আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন মঞ্জুর করে। আমি আজ পুর্ণাঙ্গ সত্য প্রকাশের অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে সাক্ষ্য দিচ্ছি।’

সাবেক আইজিপি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৯০ সালে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি আমার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। আমাকে প্রথমে দেড় বছর এবং পরে আরো এক বছর আইজিপি হিসেবে এক্সটেনশন দেওয়া হয়। আইজিপি পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে গোপালগঞ্জকেন্দ্রিক গ্রুপিং ছিল। ওই গ্রুপিং যাতে প্রকাশ না হয় এবং পুলিশের সুনাম রক্ষার্থে আমাকে এক্সটেনশন দেওয়া হয়।’

চৌধুরী মামুন বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক রাজনৈতিক মেরূকরণ হয় এবং গোপালগঞ্জকেন্দ্রিক বলয় তৈরি হয়। পুলিশ অফিসাররা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হয়। এসব কারণে সিনিয়র অফিসারদের পক্ষে পুলিশকে কন্ট্রোল করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।

৫০ শতাংশ ব্যালট ভরে পুলিশের পদোন্নতি

আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় আমি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ছিলাম। তখন আইজিপি ছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী। আমি জানতে পারি, তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ৫০ শতাংশ ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামর্শ দেন। সরকারের পক্ষ থেকে সে মোতাবেক ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি ও দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী এসব অফিসার ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তা বাস্তবায়ন করেন। যেসব পুলিশ অফিসার ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করেন, তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপিএম, পিপিএম পদক দেওয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়।

পুলিশে ছিল দুটি গ্রুপ, ব্যাহত হয় চেইন অব কমান্ড

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব আরো বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু পুলিশ অফিসার প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক নেতাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় প্রায়ই রাতের বেলায় বৈঠক বসত এবং তা গভীর রাত পর্যন্ত চলত। যেসব পুলিশ অফিসার ওই সব বৈঠকে অংশ নিতেন, তাদের মধ্যে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির অ্যাডিশনাল কমিশনার হারুন অর রশিদ, এসবির অ্যাডিশনাল আইজিপি মনিরুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, অ্যাডিশনাল এসপি কাফি, ওসি মাজহার, ওসি ফরমান, ওসি অপূর্ব হাসানসহ বেশ কয়েকজন অফিসার ছিলেন। তাদের কারো কারো সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল।

সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকার কারণে ওই সব পুলিশ অফিসার চেইন অব কমান্ড মানতেন না। কিন্তু আমি চাইতাম তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন।

প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে মূলত দুটি গ্রুপ ছিল। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, আরেকটি প্রপের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলাম। তারা চাইতেন তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।

অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন ও ক্রসফায়ার

চৌধুরী আল-মামুন বলেন, ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি র‍্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় জানতে পারি—হেডকোয়ার্টার পরিচালিত উত্তরায় র‍্যাব-১-এর কম্পাউন্ডের ভেতরে টিএফআই সেল (টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেল) নামে একটি বন্দিশালা ছিল। অন্যান্য র‌্যাব ইউনিটের অধীন আরো অনেক বন্দিশালা ছিল। এসব বন্দিশালায় রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী ও সরকারের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের আটক রেখে নির্যাতন করা হতো, যা একটি কালচারে পরিণত হয়েছিল। অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যার মতো কাজগুলো র‍্যাবের এডিজি (অপস/অপারেশন) ও র‍্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের (র‍্যাব ইন্টেলিজেন্স) পরিচালকরা সমন্বয় করতেন।

র‍্যাবের দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে আনা, আটক রাখা কিংবা হত্যা করার নির্দেশনাগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসত বলে শুনেছি। এই নির্দেশনাগুলো তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের মাধ্যমে আসত বলে জানতে পারি। এই নির্দেশনাগুলো চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে সরাসরি এডিজি (অপস) ও র‍্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের (র‍্যাব ইন্ট) পরিচালকদের কাছে পাঠানো হতো।

আমি র‌্যাবের ডিজি হিসেবে যোগদানের সময় আমার পূর্ববর্তী মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ আমাকে জানান, টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমান বন্দি আছেন। আমি যোগদানের পর র‌্যাব ইন্টেলিজেন্সের ডাইরেক্টর লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেমও আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। র‍্যাবের এডিজি (অপস) ও র‍্যাব ইন্ট সাধারণত সেনাবাহিনীর অফিসার থেকে নিয়োগ করা হতো। টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমানের বন্দি থাকার বিষয়টি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের কাছে একাধিকবার উপস্থাপন করি এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে চাই। তিনি আমাকে পরে জানাবেন বলে অবহিত করেন। কিন্তু পরে তিনি আর কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।

আমি র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে আসার সময় পরবর্তী মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেনকে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয় সম্পর্কে অবহিত করি। র‌্যাব অফিসারদের মধ্যে অ্যাডিশনাল এসপি আলেপ উদ্দিন ও এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী নামে দুজন অফিসারকে আমি চিনতাম যারা বন্দিদের অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার মতো কাজে বিশেষ পারদর্শী ছিল। আলেপ উদ্দিন প্রথমে নারায়ণগঞ্জে ছিল, পরে র‍্যাবের এডিজির (অপস) প্রস্তাবমতে তাকে র‍্যাব ইন্টেলিজেন্সে পদায়ন করা হয়।

আমি র‍্যাব ডিজির দায়িত্ব পালনকালে র‍্যাবের ডাইরেক্টর (ইন্ট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, লে. কর্নেল খাইরুল ইসলাম ও লে. কর্নেল মশিউর রহমান। এছাড়া এডিজি (অপস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কর্নেল তোফায়েল, কর্নেল আজাদ ও কর্নেল কামরুল। আমার দায়িত্ব পালনকালে যদিও আমি র‍্যাব কর্তৃক মানুষকে বিনা বিচারে আটক, নির্যাতন ও কাউকে কাউকে ক্রসফায়ারে হত্যা করার মতো বিষয়গুলো জানতাম। কিন্তু আমি কোনো তদন্ত করিনি বা এগুলোর ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিইনি। এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্তগুলো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আসত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড মানা হতো না। র‍্যাবের এসব কার্যক্রমের ফলে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট র‍্যাবের ওপর এবং আমিসহ সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর স্যাংশন আরোপ করে।

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন করা হয়। এরপর ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির সরকারি বাসায় কোর কমিটির মিটিং হতো। সেখানে আমাদের আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হতো। কোর কমিটিতে আমিসহ সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) টিপু সুলতান, অতিরিক্ত সচিব রেজা মোস্তফা, এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ, র‍্যাব ডিজি ব্যারিস্টার হারুন-অর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিজি বিজিবি মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, ডিজি আনসার মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, এনটিএমসির প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ডিজিএফআই প্রধান ও এনএসআই প্রধান উপস্থিত থাকতেন।

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ