এবার অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে লিচু ও আমের ফলন কম হয়েছে। এতে বাগানিদের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আষাঢ় মাসের এই সময়ে বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব রসালো ফল।
মাত্র কুরবানির ঈদ শেষ হয়েছে এতে মানুষের হাতে নগদ টাকা যেমন কম, এছাড়াতো লেগেই আছে বাজারে নিত্যপন্যর উচ্চ মুল্য। আর এবার ফলের বাজার বরাবরের মতোই সাধারনের নাগালের বাহিরে। তাই আম, লিচুর এই মৌসুমে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই আছেন মহা বিপাকে। দোকানিকে যেমন কিছু লাভের জন্য দোকানে ফল উঠাতে হচ্ছে আবার সেই ফল বিক্রি না হওয়ায় পচে নষ্ট হচ্ছে ক্রেতার অভাবে। যা সামান্য অবশিষ্ট থাকছে তা বিক্রি করতে হচ্ছে খুবই অল্প দামে। অল্প মুল্যার ফল ক্রেতারা যেমন পাচ্ছে না ফলের আসল স্বাদ অপরদিকে দোকানিকেও গুনতে হচ্ছে লোকসানের অংক ।
আজ শনিবার (২২ জুন) বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ধুনুট মোড় এলাকায় কয়েকটি দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায় ।
এসময় কথা হয় ফল বিক্রেতা শ্রী রাম চন্দ্র সরকারের সাথে তিনি জানান, ক্রেতা সংকট ও অতিরিক্ত দামের কারনে বিক্রি না হওয়ায় আম ও লিচু পচে যাচ্ছে। বাজারে লিচুর দাম ৪০০- ৫০০ কিন্তু পচে যাবার কারনে ১৫০ টাকায় কিনছেন সীমিত আয়ের মানুষেরা। এতে লোকসান হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। অপরদিকে আম পাইকেরি কিনেছি ৮০ টাকা কেজি কিন্তু বিক্রি করছি ৬০- ৭০ টাকা কেজি দরে। এতে ১০-২০ টাকা লোকসান হচ্ছে। আজ বিক্রি না হওয়ায় পচে গেলে এক ঝাকা লিচু ও দুই ক্যারেট আম ফেলে দিয়েছি ।
আরেক বিক্রেতা মেহেবুল ইসলামের কাছে লিচু পচে যাবার কারন জানাতে চাইলে তিনি বলেন, লিচুর অতিরিক্ত দামই মুল কারন। তিনি আরও বলেন, ১০০ লিচুর দাম ৫০০ টাকা হওয়ায় কেনার মতো সামর্থ না থাকায় বিক্রি কম হচ্ছে ফলে পচে যাচ্ছে। মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় লিচুর স্বাদ ও তেমন নেই। ‘এই লিচু খাওয়ার চেয়ে পানি খাওয়া অনেক ভালো’ এভাবেই বলছিলেন এই বিক্রেতা !
পচা লিচু কিনতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, ৪০০ টাকায় লিচু কেনার সামর্থ নেই, তাই পচে যাওয়া ছরি থেকে বেছে বেছে ভালগুলো কিনছি। ১০০ লিচুর দাম ১৫০ টাকা নিচ্ছে। ভরা মৌসুমে খেতে না পারলেও মৌসুম শেষে কম দামে কিনে খেতে পেরে আমি খুশি।
এবার অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে আম ও লিচুর ফলন কম হয়েছে বলে জানা যায় কৃষিঅফিসের তথ্য সুত্রে ।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা বাজারে মান ও আকারভেদে প্রতি ১০০ পিস বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা,বেদানা লিচু বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং চায়না-৩ নামের পরিচিত লিচু বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
অথচ বিগত বছরগুলোতে এই সময়ে বোম্বাই লিচু ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, বেদানা লিচু ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা ও চায়না-৩ লিচু ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত।