ঢাকা-চট্রগ্রাম গ্রামমুখী মহাসড়কে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ব্যস্ত এলাকা চিটাগাং রোড। সারাক্ষণ এই রাস্তায় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। বাসস্ট্যান্ড এলাকা হওয়ায় থাকে গাড়ির চাপও। চিটাগাং রোড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাম পাশে ডেমরামুখী সড়কের ডানদিকে ‘চিটাগাং হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’।
চাকচিক্যহীন এই রেস্তোরাঁ নির্ধারিত মূল্যে মেলে ভাত, মাছ, মাংস, রুটি ও পরোটা। এ রেস্টুরেন্টকে নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। কার সব ছাপিয়ে এর পরিচিতি এখন অসহায়, গরীব বা বিপাকে মানুষদের রেস্টুরেন্ট নামে। রেস্টুরেন্টের ক্যাশ কাউন্টারের সামনে ঝুলছে একটি প্ল্যাকার্ড। যেখানে লেখা ‘পেটে ক্ষিধা কিন্তু পকেটে টাকা নেই। চিন্তা ছাড়া দোকানের মালিককে বলে খেয়ে নিন।’
কেউ বিপদে পড়েছেন, পকেটে টাকা নেই, কিন্তু ক্ষুধা আছে, সেই কথা হোটেল মালিক মো. খোরশেদ আলমকে জানালে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে নিশ্চিত করতে হবে, আসলেই খাওয়ার মতো টাকা তার কাছে নেই। শুধু তাই নয়, প্রতি রবিবার অসহায় কিংবা দরিদ্র মানুষদের জন্য থাকে বিশেষ খাবারের আয়োজন। ওই দিন ৫০ থেকে ৭০ জন ব্যক্তি কোনো টাকা ছাড়াই খেতে পারেন ভাত, মাছ, মাংস।
নিত্যপণ্যের উর্দ্ধগতিতে বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ। নিত্যপণ্যের বাজারের এই অবস্থায় ফুটপাতের হোটেলগুলোতে ডিম, ভর্তা, ডাল দিয়ে একবেলা খেলেও বিল হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মাঝারি মানের রেস্টুরেন্টে একবেলা ভাত, মাছ কিংবা মাংস খেতে খরচ করতে হয় ১০০ থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতিতে কোনো রেস্তোরাঁ মালিক বিনামূল্যে মানুষকে খাওয়াবেন ঢাকা শহরে এটি অকল্পনীয়। কিন্তু সেই অকল্পনীয় কাজটি করে চলেছেন খোরশেদ।
গত রবিবার সন্ধ্যায় খোরশেদের রেস্তোরাঁয় বসে কথা হয় তার সঙ্গে। আলাপকালে তিনি বলেন, অনেকটা জেদের বশেই তিনি এই ব্যবসায় নেমেছেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। এখন স্ত্রীকে নিয়ে ডেমরার আদর্শনগরে থাকেন। দুই যুগ আগের অতীতে ফিরে তিনি বলতে থাকেন, ১৩/ ১৪ বছর বয়সে একবার বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে যান। চলে যান সিলেটে। ক্ষুধার যন্ত্রনায় কাজ নেন সেখানকার শাহপরান মাজার এলাকার একটি রেষ্টুরেন্টে। সেখানে ১২ ঘন্টা কাজ করিয়ে মালিক দিতেন একবেলা খাবার। এ থেকে জেদ কাজ করে তার।
তিনি বলেন, তখনই মনস্থির করি জীবনে একবারের জন্য হলেও আমি রেস্টুরেন্টের মালিক হবো। সেখানে গরীব, অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষকে ফ্রিতে খাওয়াবো। বছর দুয়েক আগে এই রেস্টুরেন্টের মালিকানা নেন আরেকজনের কাছ থেকে। তখন থেকেই তিনি গরীব, অসহায় মানুষদের কোনো টাকা ছাড়াই খাওয়াতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি ব্যস্ত এলাকা। নানা বয়সের নারী, পুরুষের আনাগোনা এখানে। লক্ষ্য করেছি, যারা হোটেলে খেতে আসেন তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির। নানা কাজে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাওয়া আসা করেন। অনেকের কাছে ভাড়ার টাকা ছাড়া খাওয়ার মতো টাকা থাকেনা।
আবার কিছু থাকলেও তা দিয়ে মাংস বা মাছ খাওয়ার সামর্থ্য নেই। আবার এমন কিছু লোক আছেন যাদের আসলে কোনো ঠিকানা নেই। তখন নিজেই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করি। তাদের আশ্বস্থ করি যে, টাকা না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই।’