৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
spot_img

ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে নির্মিত হয়েছে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য প্রথম মসজিদ। এ মসজিদ নিয়ে আপত্তি নেই এলাকাবাসীর বরং খুশি হয়েছেন তারা। নগরীর ৩৩ নং চর কালিবাড়ি ওয়ার্ডের বড়ইকান্দী গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদটি। এতে হিজড়াদের সঙ্গে নিয়মিত নামাজ পড়ছেন এলাকার সাধারণ মানুষও।

চলতি রমজান মাস শুরুর এক সপ্তাহ আগে এ মসজিদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সরকারি জমিতে হিজড়াদের প্রথম মসজিদ

সরেজমিনে শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেলে নবনির্মিত এ মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, এক কক্ষ বিশিষ্ট মসজিদটির দেয়াল ও চাল টিনের। সামনে ছোট্ট বারান্দা। পাশেই বসানো হয়েছে সাবমারসিবল পাম্প, ওজুখানা ও বাথরুম। জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ৩৩ শতক জমি বরাদ্দ নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বানানো এ মসজিদের নাম দক্ষিণ চর কালিবাড়ি মসজিদ।

স্থানীয় হিজড়া ও এলাকাবাসী জানান, বড়ইকান্দী গ্রামের পাশেই একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন ওই এলাকায় বসবাসকারী কয়েকজন হিজড়া। তখন মুসল্লিদের কেউ কেউ হিজড়াদের নিয়ে কটূক্তি করতেন। এতে বিব্রতবোধ করে হিজড়ারা তাদের নেতা তনু হিজড়াকে বিষয়টি জানায়। পরে নিজেদের মধ‍্যে আলোচনা করে তারা এ মসজিদ নির্মাণের উদ‍্যোগ নেন।

সরকারি জমিতে হিজড়াদের প্রথম মসজিদ

এ মসজিদের সভাপতি স্থানীয় বড়ইকান্দী গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল মোতালেব জানান, হিজড়াদের সঙ্গে আমরাও একমত হয়ে এ মসজিদ নির্মাণ করেছি। এতে স্থানীয় বাসিন্দারাও নিয়মিত নামাজ পড়ছেন।

এ সময় কথা হয় উদ‍্যোক্তাদের একজন স্থানীয় হিজড়া মো. এনামুল হক রাসেল ওরফে রাশি হিজড়ার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘এ এলাকায় আমরা ৪০ জন হিজড়া বসবাস করি। আমরাও নামাজ কালাম করতে চাই। কিন্তু পাশের এক মসজিদে আমাদের কয়েকজন নামাজ পড়তে গেলে অনেকেই হাসাহাসি ও কটূক্তি করে। এ জন‍্য আমরা বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে ৩৩ শতক জমি বরাদ্দ নিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি। পাশাপাশি একটি মাদরাসা, তিনতলা মসজিদ কমপ্লেক্সসহ কবরস্থান ও একটি প্রাথমিক বিদ‍্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত এসব প্রতিষ্ঠান বাস্তবে রূপ নেবে। সেই সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার আমাদের মসজিদের জন‍্য দুই লাখ টাকা দিয়েছেন, এটা দিয়েই আমরা এ মসজিদের প্রাথমিক কাজ করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সব সময় সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হিজড়া জনগোষ্ঠী। ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানেও তাদের সুযোগ কম। তাই সরকারের দান করা জমিতে আমরা মসজিদ বানিয়েছি।’

স্থানীয় মুদি দোকানি মো. আজিজুল হক বলেন, ‘নদের তীরে এলাকাবাসীর একটি মসজিদ ছিল। সেটি কিছুদিন আগে ভেঙে পড়েছিল। এরপর স্থানীয় হিজড়ারা একটি মসজিদ করতে চাইলে আমরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে এ মসজিদ করেছি। এখন সবাই একত্রে নামাজ পড়ি। ভালোই লাগে। আশা করছি, এর মাধ‍্যমে হিজড়ারাও আল্লাহর পথে অনুপ্রাণিত হবেন।’

জানতে চাইলে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজীয়া বলেন, ‘স্থানীয় হিজড়া জনগোষ্ঠীর কিছু সদস‍্য আমার কাছে এসে মসজিদের জন‍্য জমি চাইলে তাদের ৩৩ শতক জমি সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এরপর সম্প্রতি তারা মসজিদের ঘর নির্মাণের জন‍্য আমার কাছে সহযোগিতা চায়। পরে আমি তাদের জন‍্য একজন বিত্তবান মানুষের কাছ থেকে দুই লাখ টাকার ব‍্যবস্থা করে দিয়েছি। শুনেছি তারা এখন মসজিদ নির্মাণ করে নামাজ পড়ছেন। এটা ভালো উদ্যোগ।’

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ