৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আর কত খু-ন হবে বগুড়ায়?

spot_img

আর কত খুন হবে বগুড়ায়? মানুষ কি জানমালের নিরাপত্তা পাবেনা? বাড়ি থেকে বেরুবার পর নিরাপদে বাড়ি ফেরার গ্যারান্টি আছে  কি?  এ রকম প্রশ্ন এখন জনমনে। একটি খুনের রেশ না কাটতেই আরেকটি খুন হচ্ছে বগুড়ায়। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে বেশি নৃশংসভাবে খুন করা হচ্ছে। নিজের আপনজন ও বন্ধুর হাতেও খুন হচ্ছে অনেকে। একের পর এক খুনের ঘটনায় বগুড়ার নাগরিক সমাজ শঙ্কিত।

খুনোখুনিতে চরম অবনতি হয়েছে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির। খুনিদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ১১ মাস বয়সী শিশুও। জন্মদাতা বাবা শিশু সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করছে। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাষান্ড বাবা। হত্যার ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহের জন্য নিজের শিশু সন্তানকে জবাই করে খন্ডিত মস্তক পলিথিন ব্যাগে তুলে নিয়ে করতোয়া নদীতে ফেলে দেয়ার মত গা শিউরে ওঠার মত ঘটনাও ঘটছে।

বাবার কাছে সন্তান,স্বামীর কাছে স্ত্রী, ভাইয়ের কাছে ভাইও নিরাপদ নয়। নিজের পরিবারেও কেউ নিরাপদ নয়। শুধু স্বার্থের বলি হচ্ছে তারা। স্বার্থের জন্য অতি আপনজনকেই হত্যা করে পথের কাটা সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোথাও নেই সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তা।

এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বগুড়ার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাছুদার রহমান মিলন বলেন, বগুড়ায় একের পর এক খুনের ঘটনায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। খুনের সাথে শহরে বেড়েছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও চুরি-ছিনতাইসহ সব ধরণের অপরাধ। খুনোখুনির ঘটনায় নাগরিকরা শঙ্কিত। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা চায়।

এ ব্যাপারে আইন শৃংখলা বাহিনীকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। তবে এ ব্যাপারে বগুড়ার পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, খুন করে কেউ পার পাচ্ছে না। খুনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা হচ্ছে। ক্লুলেস মামলার রহস্যও উদঘাটিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, সামাজিক ও পারিবারিক কারণে খুনের ঘটনা ঘটছে। তুচ্ছ কারণেও খুনের ঘটনা ঘটে। পরোকিয়ার কারণে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব থেকে বিরোধের জের ধরে নারীরা খুন হচ্ছে। জমি-জমা নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে খুনের ঘটনা ঘটছে।

সন্ত্রাসীর হাতে সন্ত্রাসী খুন হচ্ছে। এছাড়া আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেও শহরে খুন হচ্ছে। আর গ্রামে জমি-জমা ও পারিবারিক কারণে বেশি খুনের ঘটনা ঘটছে। তিনি আরও বলেন, বগুড়ার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ভালো আছে। অপরাধ দমনে সাধারণ মানুষকে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে।

এদিকে, পুলিশেরই এক পরিসংখান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে বগুড়ায় নারী ও শিশুসহ খুন হয়েছে ২৯ জন। সর্বশেষ জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে নারী-শিশুসহ আরও ৫ জনকে খুন করা হয়েছে। আজ সোমবার (১০ জুন) ধুনট উপজেলার চিকাশি ইউনিয়নের জোড়শিমুল গ্রামে বন্ধুর সাথে বাকবিতন্ডার জেরে এক কিশোর কে খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয় খুন করে রাস্তার পাশে কালভার্টের নিচে পানির মধ্যে ফেলে রাখা হচ্ছে লাশ। গতকাল শনিবার এক রাতেই বগুড়ায় ২ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

এর মধ্যে বগুড়া শহরের উপকণ্ঠে সাবগ্রামের কুরশা পাড়া এলাকায় একটি কালভার্টের পাশ থেকে আনুমানিক ২৬ বছর বয়সী এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্বত্তরা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা মহাসড়ক সংলগ্ন কালভার্টের নিচে পানিতে ডুবিয়ে রাখ হয়।

রোববার (৯ জুন) ৯ জুন সকালে পুলিশ সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। পুলিশের ধারণা, গতকাল শনিবার রাতে তাকে হত্যা হয়েছে।

সেই সাথে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সোয়া দশটার দিকে কাহালু উপজেলার মুরাইল ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি এলাকায় তালুকদার পাড়া রাস্তার মোড়ে সন্ত্রাসীরা বগুড়ার আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ২৯ মামলার আসামি ব্রাজিলকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। রাস্তায় পাশে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা তার মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে তাকে কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

এছাড়া গত ২ জুন বগুড়ার শাজাহানপুরের বনানীতে শাজাহানপুরের বনানী এলাকায় শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলে স্ত্রী আশামনি ও ১১ মাস বয়সী শিশু পুত্র রাফিকে জবাই করে হত্যা করা হয়। শুধু স্ত্রী সন্তানকে নৃশংসভাবে খুন করেও ক্ষান্ত হয়নি পাষান্ড বাবা আজিজুল।

সে ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহের জন্য  তার ১১ মাস বয়সী সন্তানের মাথা কেটে পলিথিন ব্যাগে তুলে নিয়ে শহরের চেলোপাড়া রেল ব্রীজের নিজে ফেলেও দেয়। লোমহর্ষক এই জোড়া খুনের ঘটনা দেশব্যাপী তোলপাড় হয়।

এর আগে গত বছর ২০২৩ সালে বগুড়া জেলায় খুন হয়েছে ৮৯ জন। তার আগের বছর ২০২২ সালে বগুড়ায় খুনের শিকার হয়েছে আরও ৭৭ জন। সব মিলিয়ে ২ বছর ৫ মাসে বগুড়ায় খুন হয়েছে ১৯৫ জন। সে হিসাবে বগুড়ায় প্রতিমাসে খুন হচ্ছে  ৬ জন করে।

গত বছর জেলায় ৮৯ জন খুন হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে বগুড়ায় অন্তত: ৬ জন করে মানুষ খুনের শিকার হচ্ছে। শুধু সামাজিক বা পারিবারিক  কারণেই নয়, জমি-জমা, প্রতিহিংসা, আধিপত্য বিস্তার, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব, মাদক ও বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজির টাকা ভাগবাটোয়া, এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও খুনের ঘটনা বাড়ছে।

এ ব্যাপারে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র মো: শরাফত ইসলাম বলেন, খুনের ঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার হচ্ছে এবং তারা আদালতে হত্যার দায় স্বীকারও করছে। তিনি দাবি করেন বগুড়ায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির কোন অবনতি হয়নি। সূত্র : করতোয়া

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ