ওয়ালিউল্লাহ আল মুকাদ্দাস
ছাত্র, বশেমুরবিপ্রবি গোপালগঞ্জ।
সত্যের কথা যখনই শিরোনাম হয় মিথ্যা তখনই প্রকটতর হয়। মিথ্যার যুক্তি যতোই ফুরিয়ে রিক্ত কোঠায় ঘনায় পেশিশক্তির প্রয়োগ ততোই ব্যপকতর হতে থাকে। এমনি কিছু বাস্তবতার সম্মুখীন আমাদের ক্যাম্পাসগুলো। রমজান মাস আসছে আসছে করে সকলের রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয় মাসখানেক পূর্ব থেকেই। কি দিয়ে সেহেরি খাবে, ইফতারের কি আয়োজন করবে , কবে কো" শিরোনামে একটি কলাম লেগেছেন মসজিদে লোকদের ইফতার করাবে, যাকাত কত হলো , সেগুলো কোথায় কোথা দিবে আরো কত কি। এবছরও এর ব্যতিক্রম ছিলোনা। বরাবরের মতোই সকলে প্রস্তুতিতে মেতে ছিলো। যারা কখনো মসজিদের আশেপাশে হাঁটতে চাইতো না তারাও চিন্তা করে রেখেছে প্রথম রমজান থেকে ভালো হয়ে যাবো। তাদের মাঝেও ধর্মবোধ জাগে। উচ্চ বেগে প্রবাহমান নদীতে একটি মুহুর্তে হঠাৎ কেউ যদি স্রোতের বিপরীতে দাড়ায় , বা স্রোত থামিয়ে দিতে চায় তাহলে কি আর সেই স্রোত থামে? না। বরং বেশি থামানোর চেষ্টা করলে উল্টো বিদ্যুৎ তৈরি হয়। ঠিক একই ঘটনা যেন প্রধানমন্ত্রীর ইফতার নিষেধাজ্ঞার সাথে ঘটেছে। গত সোমবার ১১-মার্চ অর্থাৎ রমজানের চাঁদ যেদিন দেখা যায়।সকাল থেকেই হয়তো অনেকে বারবার ঘড়িতে সময় দেখছিলো আর অপেক্ষা করছিলো সন্ধ্যায় চাঁদ দেখবে বলে। ক্যম্পাসের ছাত্ররা হয়তো ভাবছিলো কাল থেকে বন্ধুদের নিয়ে ইফতার করতে পারবো। ঠিক এমনি কিছু ভাবতে ভাবতে সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়ালো। চোখে ঘুম ঘুম ভাব , মোবাইলটা হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে করছে দেখছিলো বন্ধুদের পোস্ট করা ছবি আর ক্যপশনগুলো। দেখতে ভালোই লাগছিলো। আগের কিছু স্মৃতির কথাও মনে হচ্ছিল। হঠাৎই চোখে পরলো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নোটিশ। নোটিশে দেখা যায় ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি /মাহফিল করতে পারবেনা। তাংক্ষনিক ভাবে ঘুম-টুম সব নিমিষেই উধাও। আবার মনোযোগ দিয়ে দিখতেছিলো কিছু ভুল দেখলাম কিনা। কিন্তু না নোটিশ তো ঠিকই আছে। অনেক রাগ হচ্ছিল মনে মনে। এটা কিভাবে সম্ভব। নোটিশে আরো বলা আছে এটি নাকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে দেয়া। এতো হাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতি নগ্ন হস্তক্ষেপ ব্যতিত কিছুনয়।কিছুক্ষণ পর আবার আসলো আরেক নোটিশ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেখানেও ঠিক একই নোটিশ। ক্যম্পাসে ইফতার পার্টি করা যাবেনা।গরম রক্তের যেনো তাপ আরো বেড়ে গেলো হু হু করে। মুহুর্তেই এমন হাজার হাজার রক্তগরম ছাত্ররা শেয়ার আর প্রতিবাদ করতে থাকলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে। কেউ ফেসবুকে লিখে কেউ আবার পোর্টালে। কেউ নিজ অবস্থান থেকে আলোচনা, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা করা শুরু করে দিল। এভাবে এই তথ্য ছড়িয়ে পরলো দেশজুড়ে প্রতিবাদের কন্ঠস্বর বৃদ্ধি হতে থাকলো । ভয়ে হয়তো আর অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নোটিশ রেডি করে রাখলেও প্রকাশ করতে সাহস পায় নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর , জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশে নামিদামি সব প্রতিষ্ঠানেই প্রতিবাদ করা হয়েছে। তারমধ্যে কোন একজনের মাথায় হঠাৎ আসলো গণ-ইফতার কর্মসূচির পরিকল্পনা। সবার পছন্দ হয়ে গেলো।ব্যাস কোন কথা নেই। ব্যেটে বলে ছক্কা হয়ে গেলো। আগে কখনো রমজানে গন-ইফতার শব্দটি এতো বেশি প্রচলিত ছিলোনা। অন্তত আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো শব্দটিকে তেমন হাইলাইটস আকারে দেখিনি।
যাইহোক শুরু হয়ে গেলো গন-ইফতার। পাড়ায় পাড়ায়, ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে, জেলায় জেলায় এমনকি উপজেলা ইউনিয়ন পর্যায়েও শুরু হয়ে গেলো নতুন এক আনন্দ। মনে হচ্ছিল যেনো ঈদের আগে একটি ঈদ। একযোগে সব বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আয়োজন করা হলো গন-ইফতার। যদিও বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে বেশ কাঠখড়ি পোড়াতে হয়েছে আয়োজকদের। হবে না-ই বা কেন এতো যেমন তেমন কিছুনা এতো এক প্রতিবাদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলগুলোতে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে, সাস্ট, বশেমুরবিপ্রবি সহ কলেজ পর্যায়ে পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে এই গন-ইফতার কনসেপ্ট। ইফতার পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে মোট ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণ-ইফতার’ কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রয়েছে—দেশের নাম করা সব প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি রমজান শীর্ষক আলোচনা বিশেষ করে "প্রোডাক্টিভ রমাদান"। আর এই আয়োজন করতে গিয়ে ঢাবির আইন বিভাগের ভাইটির উপর আক্রমণ তো সকলেই কমবেশি একন কারো অজানা নয়। মানবজমিন পত্রিকার নিউজ অনুযায়ী দিনটি ছিলো ১৩ মার্চ । কিছু শিক্ষার্থী দুপুর দুইটার দিকে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার মসজিদে নামাজ আদায় করে রমজান শীর্ষক আলোচনা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হটাৎ করেই শুরু হয়ে গেলো তাদের উপর আক্রমন।
এই বিষয়টি নিয়ে ঢাবির আইন বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন - "ছাত্রলীগের এই আক্রমন ফৌজদারি অপরাধ"।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামটির বিষয়টি দেখেন, কিছু শিক্ষার্থী ' আরবি সাহিত্য পরিষদ ' ব্যানারে একটি আসরের আয়োজন করে। এতে অস্বাভাবিক কি আছে? বিশ্ববিদ্যালয় দৈনিক কত কত প্রোগ্রাম হয় এর অর্ধেকও অনুমতি নিয়ে করা হয় না। এমনকি অনুমতি আবশ্যকও না। কিন্তু ঘটনা হলো কি? গত ১০ মার্চ রমজান মাস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বটতলায় অনুষ্ঠিত কোরআন তেলাওয়াতবিষয়ক অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের থেকে অনুমতি নিয়ে করেনি বলে দাবি করেছে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির। অনুষ্ঠানের আয়োজক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিনা তা যাচাইয়ের জন্য আরবি বিভাগের চেয়ারম্যানের নিকট চিঠি পাঠিয়েছে। এ সময় ‘তাদের কেন শাস্তি প্রদান করা হবে না’ এই মর্মে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে জবাব চাওয়া হয়।
গত ১৩ মার্চ আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুবায়ের এহসানুল হক বরাবর কলা অনুষদের ডিন এই চিঠি প্রেরণ করে।
এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আছিফ নজরুল যুগান্তর কে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় কুরআন তিলাওয়াতের যে আয়োজন করা হয়েছিল, এর আগের কয়েকটি ঘটনা বিবেচনায় নিতে হবে। যেমন— সরকারের পক্ষ থেকে একটি বার্তা এলো যে, এবার কোনো ইফতার পার্টি করা হবে না। আমি এটাকে খুব সাধারণ ঘটনা মনে করি না। ইফতার পার্টি করা হবে না— এ ঘোষণা আপনি কেন দিলেন? কৃচ্ছ্রতাসাধনের জন্য? এই দেশ থেকে লক্ষ-কোটি টাকা পাচার হয়ে যায় সেটার বিচার করেন না। একটা ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ৬টা ব্যাংক খালি করে দিচ্ছে তার কোনো বিচার করছেন না। ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প ৩০০ কোটি বানিয়ে ২০০ কোটি লুটপাট করছে, সেগুলোর কোনো খবর নেই। সামান্য একটা ইফতার পার্টির আয়োজন করতে কয়েক হাজার টাকা লাগে সেটা যখন আপনি বন্ধ করে দিচ্ছেন কৃচ্ছ্রতার কথা বলে, তখন মনে হয় এটি একটি উসকানি।
তিনি বলেন, এটির কোনো প্রয়োজন ছিল না, আমার মনে হয়েছে এটি উসকানি। বরং আপনি বলতে পারতেন— আমরা ইফতার পার্টিতে গরিবদের খাওয়াব। কোনো আতিশয্য করব না। আর শিক্ষাঙ্গনে ইফতার মাহফিলে কেউ আতিশয্য করেও না। অনেক গরিব ছাত্র এখানে ইফতার করে। এমন প্রেক্ষাপটে বটতলায় এ ঘটনাটি ঘটেছে, এর সঙ্গে কীসের সংযোগ আছে আমি জানি না।
আসিফ নজরুল বলেন, আপনি নিরপেক্ষভাবে চাইতে পারেন বটতলায়— এ অনুষ্ঠান হবে না। কিন্তু এর তো একটি প্রকার নির্ধারণ করতে হবে। কেউ যদি প্রশ্ন তুলে বটতলায় নাচ-গান হচ্ছে, সেখানে যদি কেউ পূজা করত আপনি কি বাধা দিতেন? বটতলায় পূজা করলে কী এমন প্রতিক্রিয়া দেখাতেন? তাই এগুলো (উসকানি) আপনি উড়িয়ে দিতে পারেন না।
ব্যক্তি অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে আইনের এ অধ্যাপক বলেন, আমি যখন লন্ডনে পড়াশোনা করতাম, সেখানে দেখতাম ইসকনের লোকেরা তাদের প্রচার চালাত। বিনামূল্যে খেতে দিত। এ জন্য ইউনিভার্সিটির কোনো অনুমতি নিতে হয়েছে বলে আমি দেখিনি। যারা লন্ডনে পড়েছেন তারা সবাই বলতে পারবেন— ফিলিস্তিনিদের জন্য সমাবেশ হতো কোনো অনুমতি ছাড়াই। আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রকাশ্য জায়গাগুলো রয়েছে সেখানে ধর্মীয় সভা না করাই ভালো। বটতলা বা মাঠে নামাজ-পূজা না হলেই ভালো। কারণ এগুলোর জন্য তো নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি করে তাদের শোকজের পক্ষপাতি না। আপনার অপছন্দ হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মতামত জানাতে পারেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন পরিচয়ে জানতে চাচ্ছেন- অনুমতি নিল না কেন। এটার পক্ষপাতি আমি না।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন রেখে আসিফ নজরুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রোগ্রাম করতে হলে অনুমতি নিতে হবে কেন? পরিচয় জানতে চাইবেন কেন? আপনি ব্যক্তিগতভাবে বিভাগীয় প্রধানকে বলতে পারেন এমন না করলে ভালো। কিন্তু যখন পরিচয় জানতে চান, তখন এটির ভিন্ন মেসেজ যায়। এগুলো খুবই স্পর্শকাতর ইস্যু। তাই বুঝেশুনে কাজ করতে হবে"। [যুগান্তর থেকে নেয়া]
আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান জুবায়ের মুহাম্মদ এহসানুল হক স্যার বলেন "আমি মনে করি, রমজান মাসে শিক্ষার্থীরা কোরআন তেলাওয়াতের অনুষ্ঠান করেছে। তাদের এই অনুষ্ঠানের অনুমতি ‘নেওয়া না নেওয়া’ নিয়ে প্রশ্ন তোলা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার শামিল"।
গন-ইফতার আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটকিয়তার বিষয়টি অনেক মজার ছিলো। 'ঢাকাপোষ্ট ডট কম' এর একটি প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য দিচ্ছি
"আসরের পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থলে জড়ো হতে থাকলে তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলতে থাকেন মাদার বখস্ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা তামিমসহ কয়েকজন। তাদের পাশেই উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু।
শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলার বিষয়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, আমরা কাউকে সরিয়ে দেইনি। এটার আহ্বায়ক জোহা কোথায়? একসঙ্গে ইফতার করার জন্য আমরা তাকে ডেকেছিলাম। সে কোথায়? এই আয়োজনের জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কারো থেকে প্রশাসন থেকে অনুমতি নেয়নি।"
এখানেই শেষ নয়। পরবর্তীতে অনেক নাটকীয়তার পর জোহাকে কাছে বসিয়ে ইফতার করে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ইফতারে উপস্থিত ছিলো বিভিন্ন বিভাগের কয়েকশত শিক্ষার্থী।
ইফতার শেষে করতেই ঘটনা পুনরায় মোড় নেয় নাটকীয়তায়। উপস্থিত সবাইকে নামাজে যেতে বললেও, জোহার সঙ্গে কথা বলবে বলে জানায় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এই বলে জোহাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে চাচ্ছিল বারবার, কিন্তু তিনি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেই কথা বলার অনুরোধ করেন। তাও তাকে বারবার অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। এসময় শতশত শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান স্যার এবং সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মনি ফেরদৌস। এই দুই শিক্ষক নামাজের পর নেতাদের জোহার সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন। শুরু করে দেয় শিক্ষকদের সাথে বাকবিতন্ডা।
এসময় অনেক ঘামতে দেখা যায় জায়েদ এইচ জোহাকে। একপর্যায়ে তিনি বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করছি। তখন ওই দুই শিক্ষক ছাত্রলীগ নেতাদের বলেন, তোমরা পরে, কাল বা পরশু ওর সঙ্গে কথা বলতে পারবা। ওকে যেতে দাও। এরপর আবার জোহার সঙ্গে একান্তে কথা বলে এসে সবার সামনে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জোহাকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি আমাদের সঙ্গে যাবে কিনা? তখন জোহা সম্মতসূচক বলে , যাবো ভাই। এরপর উপস্থিত ওই শিক্ষক বলেন, তাকে আমরা তোমাদের জিম্মায় দিলাম। তার যেন কিছু না হয়। এরপর জোহাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের পিছনে একান্তে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একটি রিকশা ডেকে তাকে তার মেসে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে তারা।
এসময় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব গণমাধ্যমকর্মীদের বলে, ওকে শিবির সন্দেহে ডেকে নিয়েছিলো। ওর মোবাইল থেকে মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখলো, ছাত্রলীগ বাঁধা দিচ্ছে ইফতারে, মানে একেকজনের একেকরকম তথ্য দেওয়া। ওই শিবির করে, এমন কোনো তথ্য ছিলোনা ওখানে। কিন্তু গণ-ইফতার কর্মসূচি নামে একটা গ্রুপে ছিলো, সেখানে ছাত্রলীগ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কনভারসেশন ছিলো। যেমন, ছাত্রলীগ ইফতার করতে দিচ্ছে না, মানে ওকে ইনফর্ম করছে সবাই, এটা হচ্ছে, ওটা হচ্ছে। এগুলো দেখে, ওকে ছেড়ে দিয়েছে। এভাবেই শত বাধা ঠেলে দিয়ে সফল হয়েছিলো দিনশেষে।
যাইহোক প্রসঙ্গে ফিরি। গন-ইফতার কর্মসূচি এভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে এখন সকলের মুখে মুখে। গত কয়েকদিনে ঢাকা, কুমিল্লা, বরিশাল, চট্টগ্রাম,ফেনি সহ সকল জেলায় কমবেশি এই কর্মসূচি পালিত হয়। ফেনীতে তো গন-ইফতারে একগ্রুপ এসে ইফতার নিয়ে বসে থাকা রোজাদারদের উপর আক্রমন করে এতে একাধিক রোজাদার আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
প্রথম আলোর তথ্যমতে ১৮ মার্চ সোমবার ইফতারের আগমুহূর্তে কলেজ ও জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গিয়ে সবাইকে সরিয়ে দেয়। মারধর করে। এতে আটজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আয়োজকদের ভাষ্যমতে, গণ ইফতারে অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা বিকেল থেকেই কলেজের পাশের পাইলট স্কুল মসজিদে একত্রিত হতে থাকে। খবর পেয়ে জেলা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি তোফায়েল আহমেদ, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নোমান হাবিবসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী সেখানে হাজির হয়ে রোজাদার শিক্ষার্থীদের সরে যেতে বলে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হয় কথা-কাটাকাটি। পরে শুরু করে মারধর। আহত শিক্ষার্থী আবদুল মোহাইমিন আজিম অভিযোগ করে বলেন , ইফতারে অংশ নিতে এলে তাঁদেরকে ব্যাট-স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে তারা শেষে তাঁকে প্রায় আধা ঘণ্টা আটকে রাখে। এরপর মুক্ত হয়ে সে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। বাকি আহত ব্যক্তিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
কিন্তু এই অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত তোফায়েল-নোমান রা।
কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বেশকয়েকটি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সিলেটে সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে, বরিশালের উল্লেখযোগ্য বেশকিছু আঞ্চলিক এরিয়াতে সাধারণ ছাত্রদের দেখা যায় এই গন-ইফতার। চৌদ্দগ্রামে আয়োজনে আয়োজক কমিটির এক সদস্য আল আমিন এর সাথে সাক্ষাতের পর তার কিছু অভিজ্ঞতা জানতে পারি। সে বলে -"ধাপে ধাপে অনেকবার আমাদেরকে এই আয়োজন করতে বারন করা হচ্ছিলো। এমনকি রাজনৈতিক সংকট এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিলো যে আমাদের অনেক মুরব্বিদের উত্সাহ পেয়েছিলাম কিন্তু তাদের বড় অংশই রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির ভয়ে উপস্থিত হননি। আলহামদুলিল্লাহ তাও অনেক ছাত্র- যুবক ভাইয়েরা আমাদের এই প্রতিবাদী গন-ইফতারে অংশগ্রহণ করে আমাদের আয়োজনকে সাফল্যমন্ডিত করে"।
সেখানেই উপস্থিত এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মিরাজুল ইসলাম নাফিস প্রতিদিনের খবর ডট কম কে বলেন, - “রোজা, ইফতার মুসলিমদের জন্য খুবই স্পর্শকাতর একটা বিষয়। ইফতার ধর্মীয় গণ্ডি পেরিয়ে সার্বজনীনতায় রূপ নিয়েছে। সেই ইফতারিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যেমন আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, তেমনি আমাদের সংস্কৃতির উপরও আঘাত করা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে আজ চৌদ্দগ্রামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা গণ-ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করেছে। আমরা বন্ধুবান্ধবসহ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছি”।
এ বিষয়ে কর্মসূচির আহবায়ক মোঃ রাসেল হোসেন বলেন, "বাঙালির চিরায়ত মুসলিম সংস্কৃতি রমজান, সেহেরি ও ইফতার। এই সংস্কৃতি ও ধর্মীয় রীতির উপর হস্তক্ষেপ কখনও কাম্য নয়। সম্প্রতি শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ঘটে যাওয়া ঘটনায় দুই ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংহতি জানিয়ে আমরাও আয়োজন করছি গণ ইফতার কর্মসূচি। আছরের নামাজের পরই আমাদের চৌদ্দগ্রাম এইচ জে সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ কর্মসূচি পালন করি”।
আয়োজক পক্ষে মোঃ শাকিল হোসেন জানান, “আমরা ২০০ লোকের আয়োজন করেছিলাম । কিন্তু উপস্থিতি প্রায় ৩শ জনের বেশি হয়েছিল। পরবর্তীতে আরও ইফতার ক্রয় করা হয়। এছাড়াও উপস্থিতির বড় একটি অংশ নিজ খরচে এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন”।
দেশব্যাপী গন-ইফতার এখন প্রতিবাদের নতুন এক মৃদু ভাষা হিসেবে রুপ ধারণ করেছে। সারাদেশে ছোট বড় সবার মুখে মুখে নতুন এক প্রিয় শব্দ গন-ইফতার। গ্রামের এক পিচ্চি ছোটভাইয়ের সাথে কথা। সে বলে "ভাইয়া আমাদের এখানে বন্ধুদের নিয়ে একটা গন-ইফতার করছি। ঈদের দিন একটা গন-রেলি করবো"। শুনে ভালো লাগলো গন-রেলি শব্দটি শুনে কিছুটা হাসিও পেলো।