৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ইসলামের প্রথম বিজয় ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ

spot_img

আজ ১৭ রমজান। দ্বিতীয় হিজরির এদিন সংঘটিত হয়েছিল ইসলামের প্রথম ঐতিহাসিক বদরযুদ্ধ। আল্লাহ সেদিন তার রাসুল (সা.) ও মুমিনদের বিজয়ী এবং কাফির ও মুশরিকদের পরাজিত করার মাধ্যমে হক ও বাতিলের প্রভেদ পরিষ্কার করে দিয়েছেন। কোরআনে আল্লাহ দিবসটিকে ‘ইয়াওমুল ফুরকান’ তথা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণের দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ছিল, রাসুলুল্লাহ (সা.) সংবাদ পান, আবু সুফিয়ান কুরাইশ কাফিরদের একটি বাণিজ্য দল নিয়ে সিরিয়া থেকে মক্কা ফিরছে। তিনি সাহাবিদের নির্দেশ দেন কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলার গতিরোধ করার অভিপ্রায়ে বের হতে। কেননা কুরাইশরা রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কাফির কুরাইশরা মুসলিমদের নিজ নিজ ঘরবাড়ি ও ধনসম্পদ থেকে বের করে দিয়েছিল; অবস্থান নিয়েছিল ইসলামের সত্যবাণীর দাওয়াতের বিরুদ্ধে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ৩১০-এর বেশি কিছু সাহাবিকে নিয়ে বদর অভিমুখে রওনা হন। তাদের ছিল কেবল দুইটি ঘোড়া ও ৭০টি উট, যাতে তারা পালাক্রমে চড়ছিলেন। এ যুদ্ধে ৭০ জন মুহাজির এবং অন্যরা আনসার মুজাহিদ ছিলেন। তারা বাণিজ্য কাফেলা ধরতে চেয়েছিলেন, যুদ্ধ করতে চাননি। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা অনির্ধারিত সময়ে তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মুসলিম ও শত্রুদের মাঝে মুখোমুখি দাঁড় করালেন।

আবু সুফিয়ান মুসলিমদের অবস্থা জানতে পেরে কুরাইশদের কাছে এ মর্মে একজন চিৎকারকারী সংবাদবাহক পাঠায়, যেন কুরাইশরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। তারপর আবু সুফিয়ান রাস্তা পরিবর্তন করে সমুদ্র উপকূল ধরে রওনা দিল এবং নিরাপদে পৌঁছে গেল। কিন্তু কুরাইশ সম্প্রদায় তাদের কাছে চিৎকারকারীর মাধ্যমে সংবাদ পৌঁছামাত্রই তাদের নেতৃস্থানীয় এক হাজার লোক সদলবলে যুদ্ধের উদ্দেশে রওনা দিল। তাদের ছিল ১০০টি অশ্ব ও ৭০০ উট। আল্লাহর ভাষায় তারা বের হয়েছিল, ‘অহংকার ও লোক দেখানোর উদ্দেশে এবং আল্লাহর রাস্তা থেকে বাধা প্রদান করতে।’

(সুরা আনফাল: ৪৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর সৈন্যদল সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে চললেন এবং বদর কূপগুলোর সংলগ্ন পানির কূপের সামনে যাত্রাবিরতি দিলেন। মুসলিমরা যুদ্ধের মাঠে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য উঁচু স্থানে একটি তাঁবু বানালেন, যেখান থেকে যুদ্ধের ময়দান দেখা যায়। তিনি সেখানে অবস্থান করেছিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) সেখান থেকে নামলেন, সাহাবিদের কাতার সুন্দর করে সাজালেন, যুদ্ধের ময়দানে চলতে থাকলেন এবং মুশরিকদের পতনের স্থল ও হত্যার স্থানগুলোর দিকে ইঙ্গিত করতে থাকলেন। আর তিনি বলছিলেন, ‘আল্লাহ চাহে তো এটা অমুকের পতিত হওয়ার জায়গা, এটা অমুকের মৃত্যুস্থান।’ পরে দেখা গেল, রাসুলের ইঙ্গিত করা জায়গা থেকে ওই লোকদের মৃত্যু সামান্যও হেরফের হয়নি। (মুসলিম: ১৭৭৯)

অতঃপর দুই দল (মুসলিম ও মুশরিক) পরস্পর মুখোমুখি হলো। যুদ্ধ চলতে থাকল এবং প্রচণ্ড রূপ লাভ করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁবুতে অবস্থান করলেন। তার সঙ্গে ছিলেন আবু বকর (রা.) ও সা’দ ইবন মু’আয (রা.)। তারা দুইজনই রাসুলুল্লাহ (সা.) কে পাহারা দিচ্ছিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আপন রবের কাছে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কাতর প্রার্থনা জানালেন; সাহায্য ও বিজয়ের প্রার্থনা করলেন; উদ্ধার চাইলেন। তারপর রাসুল (সা.) সামান্যতম সময়ের জন্য তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেন।

তারপর এ অবস্থা থেকে বের হয়ে বললেন, ‘অবশ্যই কাফিররা পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠদেশ দেখিয়ে পলায়ন করবে।’ (সুরা কামার: ৪৫)। তিনি মুসলিম যোদ্ধাদের যুদ্ধের প্রতি উৎসাহ দিয়ে বললেন, ‘ওই সত্তার শপথ! যার হাতে মোহাম্মদের প্রাণ, আজ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, ধৈর্য ধারণ করে সওয়াবের আশায় সামনে অগ্রসর হয়ে পৃষ্ঠদেশ প্রদর্শন না করে যুদ্ধ করে মারা যাবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (মুসলিম: ১৯০১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) একমুষ্টি মাটি বা পাথর নিয়ে কাফির দলের প্রতি ছুড়ে মারলেন। রাসুলের নিক্ষিপ্ত পাথর তাদের সবার চোখে বিদ্ধ হলো। তাদের সবার চোখেই সেটা পূর্ণ করে দিল, তারা তাদের চোখের মাটি ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল— যা ছিল আল্লাহর নিদর্শনগুলোর একটি নিদর্শন। ফলে মুশরিক সৈন্যদের পরাজয় হলো এবং তারা যুদ্ধের মাঠ ছেড়ে পৃষ্ঠদেশ প্রদর্শন করে পলায়ন করল। আর মুসলিমরা তাদের পিছু নিয়ে তাদের হত্যা ও বন্দি করা অব্যাহত রাখল।

এভাবে তাদের ৭০ জন কাফির নিহত ও ৭০ জন বন্দি হলো। নিহতের মধ্যে ২৪ জন কাফির কুরাইশ নেতাকে বদরের একটি নর্দমাক্ত কূপে নিক্ষেপ করা হলো। এদের মধ্যে ছিল আবু জাহল, শায়বা ইবন রবি’আ ও তার ভাই উতবা এবং তার ছেলে অলিদ ইবন উতবা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ম ছিল, তিনি কারও বিরুদ্ধে বিজয়ী হলে সেখানে তিন দিন অবস্থান করতেন। সে অনুসারে বদরের তৃতীয় দিনে তিনি তাঁর বাহন প্রস্তুতের নির্দেশ দিলেন, বাহনের জিন বাঁধা হলে তিনি চলতে লাগলেন। সাহাবিরা তাঁকে অনুসরণ করে পিছু পথ ধরলেন। অবশেষে তিনি কূপের পার্শ্বদেশে দাঁড়ালেন।

প্রত্যেকের নাম ও বাবার নাম ধরে ডাকলেন এবং বলতে লাগলেন, হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক, আজ তোমাদের জন্য কি এটা আনন্দদায়ক হতো না, যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করতে? আমাদের রব আমাদের বিজয় দান করার ব্যাপারে যে ওয়াদা করেছিলেন, তা আমরা যথার্থ পেয়েছি। তোমরা কি তোমাদের রবের ওয়াদা পেয়েছ? (বুখারি: ৩৯৭৬) এ হচ্ছে বদরযুদ্ধ। যে যুদ্ধে অল্পসংখ্যক সৈন্য বেশিসংখ্যক সৈন্য বাহিনীর বিপরীতে বিজয় অর্জন করেছিল। ‘একটি দল লড়াই করছিল আল্লাহর পথে এবং অপর দলটি কাফির।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩)।

অল্পসংখ্যক লোকের দলটি বিজয় অর্জন করেছিল। কেননা তারা আল্লাহর দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তারা আল্লাহর দ্বীনের কালেমা বুলন্দ করা এবং আল্লাহর দ্বীনের পক্ষে প্রতিরোধ করার জন্য যুদ্ধ করেছিল।

ফলে মহান আল্লাহ তাদের বিজয় দান করেছিলেন। অতএব রমজান শুধু সিয়াম সাধনার মাস নয়, এটি ঈমানের বিজয়ের মাসও। রমজান ছাড়াও এ মাসে নবী জীবনে মক্কা বিজয় হয়। পরবর্তীতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মহাযুদ্ধে মুসলমানের বিজয় অর্জিত হয় এই রমজান মাসে। আজকের কুফরপরিবেষ্টিত পৃথিবীতে দেশে দেশে মুসলমানরা মার খাচ্ছে। তাই প্রত্যেক ঈমানদারের উচিত, রমজানে ঈমানের বিজয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া, নিজ দেশ ও জাতির বিজয় ও বৃহত্তর স্বার্থে জেগে ওঠা।

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ