৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

‘আগে মাটি লুটে নিত আওয়ামী লীগ অ্যাহন নিচ্ছে বিএনপি’

spot_img

পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীতীরের মাটি কেটে নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে কৃষিজমি, লোহালিয়া বেড়িবাঁধসহ নানা স্থাপনা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে ওই এলাকার মাটি লুটে জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগের লোকজন। এখন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা এতে জড়িত।

লোহালিয়া নদীর উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে পটুয়াখালীর জেলা শহরের অবস্থান। এ নদীর দক্ষিণ-পূর্বপ্রান্তে সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের নদীতীরে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি আছে। এসব জমি থেকে এক্সক্যাভেটর দিয়ে দেদার কাটা হচ্ছে মাটি। পরে ডাম্পট্রাকে করে নিয়ে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এলাকাবাসীর ভাষ্য, এভাবে প্রতিদিন নদীতীরের মাটি কেটে নেওয়া হলে যেকোনো মুহূর্তে বেড়িবাঁধের রাস্তা ও পালপাড়া বাজার বিলীনের আশঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে কথা হয় পালপাড়ার বাসিন্দা, সত্তরোর্ধ্ব মো. মকবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে নদীতীরের মাটি কাইট্টা নিত আওয়ামী লীগের লোকজন, অ্যাহন মাটি কাইট্টা নিচ্ছে বিএনপির লোকজন। কহোনও রাইতে, আবার কহোনও দিনের বেলায় মাটি কাইট্টা নেয় তারা। আমি বাধা দিছিলাম, হের লইগ্যা পোলাপান দিয়া আমারে মারতে চাইছিল।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর ওই এলাকার মাটি কাটার নিয়ন্ত্রণ নেন লোহালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. কামাল হোসেন মৃধা। তিনিই লোকজন দিয়ে ওই ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ।

এতে বাধা দিলে চাপের মুখে পড়তে হয় বলে মন্তব্য করেন মো. জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘মাটি কাইট্টা নেওয়ায় আমরা অনেক বাধা দিছি। এতে আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি হইছে। এই মাটি কাটা বন্ধ না হইলে রাস্তাই থাকবে না। মাটি কাইট্টা নিতে নিতে অ্যাহোনই রাস্তা ছুঁইছুঁই অবস্থা।’

ওই এলাকার শাওন খানের ভাষ্য, আওয়ামী লীগের লোকজন যখন মাটি কেটে নিত, তারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এখন আরেকদল মাটি কেটে নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি বাধা দেওয়ায় তারা আমাকে মারতে তেড়ে আসে। পরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামাল মৃধা ভাইসহ বিভিন্ন নেতা আমাকে ফোন দেন। তারা বলেন, মাটি কাইট্টা নিলে তোমার সমস্যা কী?’ কামাল মৃধার কাছ থেকে হুমকি-ধমকি পেয়েছেন ওই গ্রামের জাফর হাওলাদারও। তিনি বলেন, ‘মাটি কাটায় বাধা দিলে কামাল মৃধা আইয়া আমার বাবাকে বলে, তোমার ঠেকছে কি? তুমি এহানে বইয়া দোকানদারি করতেছো, দোকানদারি করবা।

মাটি কাইট্টা যে নেয়, নেক! মাটি বিক্রি কইরা ফালাইছে, তাই তারা মাটি কাইট্টা নেয়। তাতে তোমার সমস্যা কী?’ এসব অস্বীকার করেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. কামাল হোসেন মৃধা। তাঁর দাবি, ওই জমি চরের ব্যক্তিমালিকানাধীন। পৈতৃক সূত্রে ওই জমি তাদের উল্লেখ করে কালাম হোসেন বলেন, ‘ওই জমি থেকে আমি ১০ কড়া জমির মাটি বিক্রি করেছি। আমার পৈতৃক জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। তবে, তা রাতের আঁধারে নয়, দিনের আলোতেই কাটা হচ্ছে।’

পটুয়াখালী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) চন্দন কর জানান, জমি সরকারি কিংবা ব্যক্তিমালিকানার হোক, নদীতীরের মাটি কেটে নেওয়ার বিধান নেই। যদি কারও প্রয়োজন হয়, তাহলে উপজেলা কিংবা জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মাটি কাটতে পারবেন। অনুমতি ছাড়া কেউ মাটি কাটলে তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হবে। এ বিষয় খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবের ভাষ্য, বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে পড়তে পারে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে–এমন জায়গা থেকে মাটি কাটা যাবে না। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ