৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ইরানের পক্ষে যেভাবে যুদ্ধে নামবে রাশিয়া

spot_img

বৈশ্বিক রাজনীতি এমন এক অস্থির ও টালমাটাল পর্যায়ে উপনীত হয়েছে,যা আগে কখনো হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা, পাক-ভারত সংঘাতময় পরিস্থিতি, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু পরীক্ষা, এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পটভূমিতে বৈশ্বিক সংঘাতে নতুন এক মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে আমেরিকা।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি রোধে আমেরিকা যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে, তাতে সামরিক অভিযান ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে। কারণ, তেহরান এখন আর কিছুতেই আমেরিকার সঙ্গে আপসে করতে যাবে না। ফলে ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের নির্দিষ্ট পরমাণু স্থাপনায় যে কোন সময় আমেরিকা বিমান হামলা চালাতে পারে।

আমেরিকা যদি সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালায়, তাহলে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্যেরই নয়, বরং গোটা বিশ্বের শক্তির ভারসাম্যকেই ওলট-পালট করে দিবে। এই প্রেক্ষিতে রাশিয়া সরাসরি ইরানের পক্ষে যুদ্ধে জড়াবে কিনা সেটাই এখন বৈশ্বিক আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু।

আমেরিকা ইরানে হামলা চালালে রাশিয়া সরাসরি ইরানের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ শুরু করবে; এমন সম্ভাবনা সীমিত হলেও, কৌশলগত ও পরোক্ষভাবে ইরানকে সহায়তা দেবে। পশ্চিমা সামরিক জোটকে প্রতিহত করার এই সুযোগ সহজে হাতছাড়া করবে না রাশিয়া।

মার্কিন সামরিক হামলায় যদি ইরান ভেঙে পড়ে, তাহলে এটি রাশিয়ার জন্য বড় বিপর্যয়কর হবে, কারণ তাহলে একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি জোট হারাবে রাশিয়া।

তাছাড়াও রাশিয়া চাইবে আমেরিকাকে ইরানে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে ব্যস্ত রাখতে।

রাশিয়া যদিও বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যস্ত। ইরানে আরেকটি ফ্রন্ট খোলা তার জন্য কৌশলগত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে। তাই সরাসরি ইরানে সেনা পাঠানো বা যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিতির সম্ভাবনা কম।

তবে প্রক্সি যুদ্ধ, অস্ত্র, গোয়েন্দা সহায়তা, সাইবার আক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেশি। রাশিয়া এছাড়াও ইরানে সামরিক হার্ডওয়্যার সরবরাহ, মধ্যপ্রাচ্যে রুশ নৌবাহিনী সক্রিয় করা,সাইবার হামলা ও যুদ্ধ পরিকল্পনায় সহায়তা করতে পারে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, “ইরানি সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। ইরানে আমাদের প্রায় ৬০০ বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। সেই কর্মসূচি ছেড়ে আমরা এখনো চলে আসিনি।

তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণে সাহায্য চালিয়ে যাবে মস্কো ।এটাাই ইরানের পক্ষে আমাদের সমর্থনকে জানান দিচ্ছে।

পুতিন আরো জানান, “ইরান-ইজরায়েল সংঘাত থামাতে মধ্যস্থতা করতে তৈরি মস্কো। চাইলেই চুক্তিবদ্ধ হতে পারে দু’দেশ। যেখানে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি বজায় থাকে। আবার ইজরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগও কমে।”

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আমেরিকা ও ইজরায়েলের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে রাশিয়া। ইরানকেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন পুতিন।

গত এক দশকে রাশিয়া ও ইরান ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতার ভিত্তি গড়ে তুলেছে। বিশেষ করে এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রাশিয়া ইরানকে সরবরাহ করেছে, যা ইসরায়েল ও মার্কিন বিমান হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইরান Shahed সিরিজ ড্রোন রাশিয়াকে সরবরাহ করেছে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। ২০২২ সালের পর থেকে দুই দেশের সামরিক মহড়া এবং প্রযুক্তিগত বিনিময় অনেকগুণ বেড়েছে।

রাশিয়া ও ইরান এই মূহুর্তে কৌশলগত সমঝোতায় সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ট অবস্থায় রয়েছে।রাশিয়া ও ইরান উভয়েই আমেরিকান নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আগ্রহী।

সিরিয়ায় উভয় দেশ বাশার আল-আসাদ সরকারকে রক্ষা করতে একসঙ্গে কাজ করেছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রাশিয়া-ইরান মুদ্রা লেনদেনেও সহযোগিতায় রয়েছে।

রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে আছে প্রক্সি ও প্রভাবের খেলায়। তাই ইরানকে বাঁচাতে সিরিয়া, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথিদের এবং আফ্রিকান মিলিশিয়া গোষ্ঠীদের সহায়তা দিতে পারে।

নতুন অস্ত্র পরীক্ষার মঞ্চ হিসেবেও মধ্যপ্রাচ্যকে ব্যবহার করার মাধ্যমে আমেরিকা ও ইসরায়েলকে ব্যস্ত রাখার এই সুযোগ কাজে লাগাতে শীঘ্রই ইরানে পাশে দাঁড়াবে রাশিয়া।

এই যুদ্ধের আগুন তখন আর শুধু মধ্যপ্রাচ্যেকে জ্বালাবে না।এই যুদ্ধের আগুনে পুড়বে বিশ্ব। তখন নতুন করে আঁকতে হবে বৈশ্বিক শক্তি-ভারসাম্যের মানচিত্র।
…………………………………..
গ্লোবাল কনফ্লিক্ট অ্যনালাইসিস
…………………………………..
এফ শাহজাহান
১৯ জুন ২০২৫

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ