৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বগুড়ায়, বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

spot_img

ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা উত্তরবঙ্গের বগুড়া অঞ্চলকে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। টেকটোনিক প্লেটগুলোর চলাচল এবং ভূত্বকের প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বগুড়ার আশপাশে বেশ কয়েকটি সক্রিয় ভূকম্পন ফল্ট লাইন রয়েছে, যা ভূমিকম্প সৃষ্টির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে, মধুপুর ফল্ট ও ডাউকি ফল্টের কারণে এই অঞ্চল ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, যদি এখানে ৭.৫ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

জানা যায়, বগুড়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে ১৮৯৭ সালের মেঘালয় ভূমিকম্প অন্যতম। এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.১ (রিক্টার স্কেল), যা সমগ্র উত্তরবঙ্গসহ বগুড়া অঞ্চলেও তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছিল। ১৯৫০ সালের আসাম ভূমিকম্পও (মাত্রা ৮.৬) উত্তরবঙ্গের ভূগর্ভে তীব্র প্রভাব ফেলেছিল। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্পের ঘটনা বগুড়ায় ঘটেনি, তবে ভূতাত্ত্বিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। গত দুই সপ্তাহে দেশের উপর দিয়ে দুইবার মৃদু ভূকম্পন অনুভুত হয়েছে।

ভূতাত্ত্বিক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “ বগুড়া অঞ্চল মধুপুর ফল্ট ও ডাউকি ফল্ট লাইনের কাছে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভূমিকম্প প্রতিরোধী অবকাঠামো নির্মাণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।”

বগুড়া গণপূর্ত অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, বগুড়ায় অনুমোদনহীন সুউচ্চ ভবনের সংখ্যা ২০০’র বেশি, যার মধ্যে বেশীরভাগ ভবন উচ্চ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে ।

বগুড়ার বনানীর বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকি। বিশেষ করে পুরনো ভবনগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে আরও সচেতনতা কার্যক্রম এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

শেরপুরের শিক্ষার্থী রেশমা আক্তার বলেন, “স্কুলে ভূমিকম্প মোকাবিলা বিষয়ক প্রশিক্ষণ পেলে আমাদের আতঙ্ক কিছুটা কমবে। এখনো অনেকেই জানেন না ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে।”

অপর এক বাসিন্দা রিনা বেগম বলেন, “আমাদের বাড়িঘর পুরনো, তাই ভূমিকম্প হলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছি। সরকার যদি আমাদের সহায়তা করে, তাহলে আমরা ভূমিকম্প প্রতিরোধী ব্যবস্থা নিতে পারবো।”

শেরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ভূমিকম্প মোকাবিলায় জরুরি সেবা প্রস্তুত রেখেছি। সাধারণ জনগণকে ভূমিকম্পকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ছোট ভূমিকম্প আমরা মোকাবেলা করতে পারলেও বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে আমাদের পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি না থাকায় বিদেশী সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।

নিরাপত্তা পরামর্শ–

ভূমিকম্প চলাকালীন টেবিল বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন।

ভবন থেকে দ্রুত বের হওয়ার সময় লিফট ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।

জরুরি সুরক্ষা সামগ্রী প্রস্তুত রাখুন।

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান বলেন, “ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ভবন মালিকদের ভূমিকম্প প্রতিরোধে (বিএনবিসি) কর্তৃক নির্দেশিত বিল্ডিং কোড অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি পরিবার ও প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে আমরা সবাই নিরাপদে থাকতে পারি।”

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ