
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর থেকে বেতন বাকি ছিল অন্তত ১৪ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পঞ্চম লটে বেতন ছাড় করা হয়েছে ৪ হাজারের মতো শিক্ষক-কর্মচারীর। দুই মাসের (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) বেতন ব্যাংক হিসাবে যাওয়ার খুদে বার্তা (এসএমএস) পেয়েছেন তারা। ১০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী ডিসেম্বর-জানুয়ারির বেতন পাননি। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারির বেতন ও ঈদ বোনাস পাননি পৌনে ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার নূরজাহান রোডের ঢাকা স্টেট কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান মিঞা সমকালকে বলেন, তাদের তিন মাসের বেতন ও বোনাস বাকি ছিল। গতকাল তিনি দুই মাসের বেতন পেয়েছেন। এখনও এক মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস বাকি।
মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের এক প্রভাষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাসের পর মাস তাদের বেতন বাকি পড়ে থাকছে। অথচ সরকারি শিক্ষকরা মার্চের বেতনও আগাম পেয়ে গেছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার সোলাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এমপিও শিটে নামের বানান ও ডট নিয়ে সমস্যা রয়েছে পাঁচজনের। ভুল জন্ম তারিখ ছিল তিনজনের। প্রধান শিক্ষক আহমেদ আলী জানান, তাঁর নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) জন্ম তারিখ ভুল থাকায় এডিট অপশন চালু করে তিনি সংশোধন করেন এবং ইএফটির জন্য জমা দেন। জমা দেওয়ার পর অনলাইনে দেখা যাচ্ছে তাঁর বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে নথিজাত হয়েছে। অর্থাৎ সংশোধনের পরও তাঁর বিষয়টি দুই মাসে সুরাহা হয়নি। এ কারণে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
একই প্রতিষ্ঠানের ইএফটি জটিলতায় অন্য শিক্ষক-কর্মচারীর অনলাইনে সংশোধন-পরবর্তী ফাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে আসেনি। অনলাইনে এমপিও শিটে ভুল সংশোধন করার আবেদন করার পরও এ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ শিক্ষক-কর্মচারী গত জানুয়ারি মাসের বেতন পেলেও আর কোনো বেতন পাননি। বিষয়টি অমানবিক বলে মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আলীম।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলিম জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও একজন কর্মচারীর বেতন হয়নি। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শাহিনা আক্তার ও অফিস সহায়ক তৌহিদুল ইসলামের জন্ম তারিখ নিয়ে জটিলতা থাকায় সর্বশেষ পঞ্চম লটেও বেতন শিটে তাদের নাম আসেনি। তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের দু’জনের বেতন পঞ্চম লটেও আসেনি।
বেতন না আসা একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী জানান, অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী বেতনের ওপর নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় তারা পরিবার নিয়ে চরম কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
ইএফটি জটিলতার কারণে বেতন না পাওয়া একাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের যেসব শিক্ষক-কর্মচারীর এনআইডি, এমপিও শিট, ব্যাংকের তথ্যের মিল রয়েছে, শুধু তারাই প্রথম ধাপে বেতন পেয়েছেন। অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীই এনআইডি, এমপিও শিট, ব্যাংকের তথ্যের সামান্য ভুল, ডট, কমা, স্পেস, আক্ষরিক ভুলের কারণে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ধাপের শুধু ডিসেম্বর মাসের বেতন পেয়েছেন। এ ছাড়া অনেকের জন্ম তারিখ, জন্ম সাল, নামের বানান ইত্যাদি শিক্ষা সনদের সঙ্গে অমিল আছে। তারাও বেতন পাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেতন-ভাতা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, তারা আপ্রাণ চেষ্টা করার পরও সবার সমস্যা সমাধান করতে পারেননি। মন্ত্রণালয়, আইবাস ও ইএমআইএস সেলের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে তারা সংকট কাটাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। সূত্র: সমকাল