৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

লোহাগাড়ায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দুর্নীতির পাহাড়!

spot_img

মুহাম্মদ জাবেদ হোসাইন বিপ্লব চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামকে ঘিরে উঠেছে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। দীর্ঘ আট বছর ধরে একই পদে বহাল এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ গ্রহণ, স্বজনপ্রীতি ও শিক্ষক হয়রানির একাধিক অভিযোগ। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, একই কর্মস্থলে তিন থেকে পাঁচ বছরের বেশি থাকা নিষিদ্ধ হলেও, তা লঙ্ঘন করে বছরের পর বছর লোহাগাড়ায় থাকার বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় শিক্ষক, অভিভাবক ও সচেতন মহল।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নুরুল ইসলাম লোহাগাড়ায় যোগ দেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী, একজন কর্মকর্তা সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর একই কর্মস্থলে থাকতে পারেন। অথচ তিনি একটানা আট বছর ধরে একই পদে বহাল রয়েছেন, যার ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ।

বিভিন্ন অভিযোগের খতিয়ান অনুযায়ী—এমপিও অনুমোদনে ঘুষ গ্রহণ, শিক্ষক নিয়োগে পক্ষপাতিত্ব, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি গঠনে হস্তক্ষেপ এবং বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণেও টাকা দাবি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, বছরের শুরুতে পাঠানো বিনামূল্যের পাঠ্যবই পেতে গেলে ‘চা-পানির টাকা’ দিতে হয়। কেউ টাকা না দিলে বই দিতে বিলম্ব করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘অফিসে কাজ করাতে বারবার যেতে হয়। তখন ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়—কিছু না দিলে কাজ হবে না।’

এছাড়া অফিসে ডেকে এনে অসম্মানজনক ভাষায় কথা বলার অভিযোগও রয়েছে নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। শিক্ষকরা এটিকে তাদের পেশাগত মর্যাদার অবমাননা হিসেবে দেখছেন।

একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এক কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একই জায়গায় থাকলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নষ্ট হয়। এত বছরেও তার বদলি না হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর।’

উপজেলার এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বদলি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এখানে সেটি মানা হয়নি। শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতিদিন দু’একজন শিক্ষক নিয়ে আড্ডা দেন, কখনো হোটেলে খাবার খেতে যান, যা প্রশাসনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী।’

এ নিয়ে লোহাগাড়ার শিক্ষক সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, শিক্ষা অফিস যেন কোনো ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে না চলে, বরং হোক জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত। তারা দ্রুত বদলি ও তদন্ত দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইনামুল হাসান বলেন, ‘সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, একজন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাধারণত তিন বছরের বেশি একই কর্মস্থলে থাকতে পারেন না। কিন্তু বাস্তবে লোহাগাড়ায় এ নিয়ম মানা হয়নি। বিষয়টি দুঃখজনক এবং তদন্তসাপেক্ষ। সুশাসন ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ