৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

যে কারণে তান্ডব রাজধানীর চার প্রবেশমুখে

spot_img

সরকারিণঞ্জ চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দলন ঘিরে রাজধানীর প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া, উত্তরা, রামপুর-বাড্ডা, বসিলাসহ মোহাম্মদপুর এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়া হয়েছে। রামপুরা বিটিভি ভবনে ঢুকে চালানো হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। হামলা ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে সেতু ও দুর্যোগ ভবন। ভাঙচুর করা হয়েছে মেট্রোরেল। এ ছাড়া আরও কয়েকটি দপ্তর আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণহানিও বেশি ঘটেছে রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোয়।

ঢাকায় ঢোকার পথ বন্ধ করে এমন তা-ব ও প্রাণহানির কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, বহিরাগতদের উপস্থিতি ছিল বেশি। স্থানীয় লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোপন প্রতিবেদনেও এ তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকার বাইরে থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা এসে সহিংসতা ও নাশকতায় অংশ নিয়েছে। সহিংসতার স্থানগুলোর লোকজন বলেছেন, আন্দোলনকারীদের অনেকেই ছিলেন অচেনা।

এ ছাড়া যেসব এলাকায় বেশি সহিংসতা হয়েছে, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেশি। এমনকি সহিংসতার বিষয়ে পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছেও ছিল না আগাম তথ্য।

পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে, ঢাকার প্রবেশমুখে সহিংসতা করে দ্রুত ও নিরাপদে অন্যত্র চলে যাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া প্রবেশমুখ বন্ধ করে দিলে ঢাকা বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব, সেটাও বড় ধরনের সহিংসতার অন্যতম কারণ।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা মনে করেছিল, ঢাকার প্রবেশপথ বন্ধ করলে সফলতা পাওয়া যাবে। সে কারণেই তারা দাঙ্গা-হাঙ্গামা করেছে। পাশাপাশি দুবৃর্ত্তরা কোনো ইস্যুও খুঁজছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়েছে। সহিংসতা ঘটার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন আগাম তথ্য পেল না তা খতিয়ে দেখা উচিত।

কোটা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র হাইকোর্ট বাতিল ঘোষণার পর ১ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। পরে তা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশ করে আসছিলেন। ১৫ জুলাই গভীর রাতে শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করে মিছিল বের করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরের দিন দুপুরে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের মিছিল ও সমাবেশে হামলা করে। তারপর থেকেই সংঘাতের শুরু হয়। সংঘাত ভয়াবহ রূপ নেয় মঙ্গলবার থেকে। সেদিন ছয়জন নিহত হয়। বুধবার সরকারি ছুটির দিনেও সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তা-ব শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি চলে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। হামলাকারীদের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বহিরাগতদের দেখা গেছে। তারা স্কুল-কলেজের ড্রেস পরে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।

তবে পুলিশের দাবি, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বিএনপি, জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা। ইতিমধ্যে উসকানিদাতা ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে পুলিশ।

মোবাইল সিমের অবস্থান খতিয়ে দেখা হচ্ছে : নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় যারা হামলা করেছে, তাদের চিহ্নিত করতে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করছি। ইতিমধ্যে কিছু হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের চেহারা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তারা চেয়েছিল বিটিভি দখলে নিতে।’ তিনি বলেন, হামলাকারী ও উসকানিদাতাদের শনাক্তে অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) পুলিশের সব ইউনিটই কাজ করছে। পাশাপাশি সব গোয়েন্দা সংস্থাও হামলাকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। ঢাকার বাইরে থেকে লোকজন এসেছে। যারা এসেছিল, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সহায়তা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সহায়তা করেছে। মোবাইল সিমগুলো পর্যালোচনা করলেই তা বের হয়ে আসবে। জেলা-উপজেলা বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সিমগুলো কোথায় ছিল তা উদঘাটন করা যাবে সহজেই। তা ছাড়া সহিসংতার স্থানগুলোর বিষয়ে আগাম তথ্য কেন পায়নি, সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। কারোর গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

যেসব এলাকায় অচেনা হামলাকারী বেশি : পুলিশ সূত্র জানায়, রাজধানীর উত্তরা, কুড়িল, নর্দ্দা, রামপুরা, মালিবাগ, রামপুরা, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, কুতুবখালী, মোহাম্মদপুরসহ আরও কয়েকটি স্থানে বেশি হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে তিন দিন আগে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একটি গোপন প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব এলাকায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার সংখ্যা বেশি। বৃহস্পতি ও শুক্রবার সহিংসতার সময় শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ছিল। তাদের সঙ্গে বহিরাগত ছিল বেশি। গত শনি ও রবিবার দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এসেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা ছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

উত্তরা, আবদুল্লাপুর ও আজমপুর এলাকায় খোঁজ নিয়েও পুলিশের এমন তথ্যের সত্যতা মিলেছে। ওই সব এলাকার তিন ব্যবসায়ী যথাক্রমে আবদুর রাজ্জাক, গাজীউল হক ও পরাগ আমিন মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, উত্তরায় ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করেছে, তারা বেশিরভাগই বহিরাগত বলে মনে হয়েছে। উত্তরা এলাকার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেনা যায়। তাদের আন্দোলন ছিল অনেকটা শান্তিপূর্ণ। শুধু কোটা নিয়ে তারা স্লোগান দিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে আন্দোলনকারীদের মধ্যে কেউ কেউ যানবাহন ও পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতেই বোঝা যায় বহিরাগতরা সক্রিয় ছিল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কারাগারে হামলা চালিয়ে বন্দি ও জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি কারারক্ষীদের আগ্নেয়াস্ত্র লুটও করেছে। তান্ডব ঠেকাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংষর্ষ হয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশ রূপান্তরের খবর অনুযায়ী, শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১৫০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সূত্র : দেশ রুপান্তর

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ