
ভেঙ্গে দেওয়া হলো উল্লাপাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সিন্ডিকেট
দলিল হবে শুধু সরকারি ফি নিয়ে
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ অবশেষে ভেঙ্গে দেওয়া হলো উল্লাপাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সংগঠনের সিন্ডিকেট। উল্লাপাড়ার সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকারি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়ে জমি ক্রেতা বিক্রেতাদের হয়রানি লাঘবের এই ব্যবস্থা নেন। আজ মঙ্গলবার এই অফিসে কর্মদিবসের শুরু থেকেই দলিল লেখকগণ কেবলমাত্র সরকারি ফি ও নিজেদের পারিশ্রমিক গ্রহণ করে দলিল রেজিস্ট্রেশন কাজ শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই অফিসে দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির নেতাদের তৈরি করা সিন্ডিকেটের শিকার হয়ে দলিল দাতা গ্রহিতারা নানা হয়রানি ও অর্থদন্ড দিয়ে যাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উল্লাপাড়ার সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম সোমবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন, উল্লাপাড়া মডেল থানা ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির নেতাদের সঙ্গে সভা করেন। এই সভায় শুধু সরকারি ফি ও দলিল লেখকদের নির্ধারিত পারিশ্রমিক গ্রহণ করে দলিল সম্পাদনের কঠোর নির্দেশনা দেন সাংসদ। এসময় উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা, উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম, সাব রেজিস্ট্রার ফারহানা আজিজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়সাল কাদের রুমি, সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ও দলিল লেখক কল্যান সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার উল্লাপাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল করতে আসা রাজু আহমেদ, মাহমুদা খাতুন, আব্দুল জলিল জানান, তাদের জমি ক্রয় করতে শুধু সরকারি ফি নিয়ে দলিল লেখকেরা দলিলের কাজ সম্পাদন করেছেন। অথচ কিছুদিন আগেও তারা এই অফিসে জমি কেনা বেচা করতে এসে সিন্ডিকেটের শিকার হয়ে অনেক হয়রানি এবং অতিরিক্ত অর্থ প্রদানে বাধ্য হয়েছিলেন। এমন অভিযোগের কথা জানালেন আরো কয়েকজন।
উল্লাপাড়া এইচ. টি. ইমাম গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে উল্লাপাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির সিন্ডিকেটের শিকার হয়ে সাধারন মানুষ নির্যাতন ও হয়রানি হচ্ছিলেন। জমির মোট মূল্যের প্রায় ১ চতুর্থাংশ বাধ্য হয়ে দিতে হতো দলিল লেখকদের হাতে। অবশেষে উল্লাপাড়ার সংসদস্য শফিকুল ইসলাম উদ্যোগী হয়ে এ অঞ্চলের মানুষকে এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্ত করলেন।
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তালুকদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি তাদের বিরুদ্ধে মানুষের ঢালাও অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে তিনি জানান, তাদের সমিতির উন্নয়নের জন্য দলিল লেখকদের বসার ব্যবস্থা, মাসিক বিদ্যুৎ বিল এবং তাদের পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য তারা কিছু বাড়তি অর্থ গ্রহণ করেছেন। তবে উল্লাপাড়ার সংসদ সদস্যের উদ্যোগে এবং তার নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ১২ মার্চ মঙ্গলবার থেকে শুধুমাত্র সরকারি ফি নিয়েই তার সংগঠনের দলিল লেখকগণ ক্রেতা বিক্রেতার দলিলের কাজ সম্পাদন করছেন।
এ ব্যাপারে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্ট্রার ফারহানা আজিজ জানান, ইতোপূর্বে দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ কিছু বাড়তি অর্থ তাদের সমিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রহণ করে আসছিলেন। এজন্য তিনি অনেকটা বিব্রত ছিলেন। প্রাথমিকভাবে এ কাজ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফির হস্তক্ষেপে তার অফিস এখন সম্পূর্ণ সিন্ডিকেট মুক্ত। সাধারন মানুষ শুধু সরকারি ফি দিয়েই এখন জমি ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন।
উল্লাপাড়ার সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নানা অনিয়ম এবং জমি ক্রেতা বিক্রেতাদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছিল। তিনি নির্বাচিত হবার পরই এই অনিয়ম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। সেই আলোকে উপজেলা প্রশাসন, উল্লাপাড়া মডেল থানা পুলিশ এবং তার দলের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় তিনি দলিল লেখকদের অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়েছেন। এখন মানুষ শুধু সরকারি ফি দিয়ে জমি কেনা বেচা করার সুযোগ পাবে।