৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

দল পুনর্গঠনের চাপ বাড়ছে বিএনপিতে

spot_img

দল পুনর্গঠনের চাপ বাড়ছে বিএনপিতে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের নতুন কোনো কর্মসূচিতে নেই বিএনপি। অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ প্রশ্ন তুললেও তা দৃশ্যত আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য নতুন কোনো চাপ তৈরি করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বে পরিবর্তন না এনে আন্দোলনে গেলে আবারো ব্যর্থ হতে হবে। ফলে আন্দোলনকে নতুনভাবে সংগঠিত করার জন্য স্থায়ী কমিটিসহ দায়িত্বশীল বিভিন্ন পদে পুনর্গঠনের চাপ বাড়ছে।
জানা গেছে, নির্বাচন-পরবর্তী দলকে সাংগঠনিকভাবে ঢেলে সাজানোর ভাবনা শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির শূন্যপদগুলো পূরণের আলোচনা চলছে বেশ জোরেশোরে। রদবদলের আলোচনায় আছে জিয়া পরিবারের সদস্যরাও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেতাকর্মীদের বিশ্লেষণে সর্বশেষ আন্দোলন ব্যর্থতার জন্য সাংগঠনিক দুর্বলতা ও বিদেশনির্ভরতার বিষয়টি সবার সামনে এসেছে। এর মধ্যে সাংগঠনিক বিপর্যয়ের জন্য দেশব্যাপী তারেক রহমানের সাংগঠনিক বলয় দায়ী এমন মতও আছে। তাদের মতে, ২০১৮ সালে দলের হাল ধরার পর থেকে বিএনপিতে একক কর্তৃত্ব তৈরি করতে গিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নিজের পছন্দে নেতাদের দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ফলে অনেক কমিটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাজনীতি করা অনেক ত্যাগী নেতা গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বাদ পড়েন। বাদ পড়া নেতাদের অনুসারীরাও নতুন কমিটি থেকে ছিটকে পড়েন। ফলে সাংগঠনিক গতিশীলতা কমতে থাকে, দলে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়। অন্যদিকে তারেক রহমান যাদের নেতৃত্বে আনেন তাদের বেশির ভাগই স্থানীয়ভাবে যোগ্য ও দক্ষ নন বলে দলে অভিযোগ আছে। কিন্তু দেশব্যাপী তার বিশ্বস্ত নেতা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা সরকার ‘ফেলে’ দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন এমন ধারণা দেন তারেক রহমানকে। কিন্তু আন্দোলনের মাঠে তাদের তৎপরতা ছিল না বললেই চলে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক চাপ এবং সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত বিএনপির মূল নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে পারেন জিয়া পরিবারের সদস্যরা দলটিতে এমন আলোচনাও আছে। বলাবলি হচ্ছে, তারেক রহমান বিএনপির নির্বাহী দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন। এ নিয়ে সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখনও যারা সক্রিয়ভাবে মাঠে থেকে বিএনপির রাজনীতি করছেন তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব বাছাই করার বিষয়েও আলোচনা করেছেন। এমন কথা চাউর আছে জিয়া পরিবারের সদস্যদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জিয়া পরিবারে বিষয়ে আলোচনাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় এনিয়ে প্রায় সব নেতাকর্মীই সতর্কতার সঙ্গে গোপনীয়তা বজায় রেখে কথা বলছেন। এর বাইরে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কমিটি পুনর্বিন্যাসের বিষয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে কয়েকজনকে বাদ এবং কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভাবছেন তারা।
জানা গেছে, বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার মতো পরিস্থিতি নেই। তাই এখন স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণসহ অন্যান্য পদসহ অঙ্গ দল পুনর্গঠনের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এরই মধ্যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশেও দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন এমন পরীক্ষিত ও ত্যাগী প্রবীণ নেতার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম বয়সি নেতাদেরও দায়িত্বশীল পদে স্থান দেওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই শূন্যপদগুলো ধারাবাহিকভাবে পূরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি সারাদেশের জেলা, মহানগরের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্যপদগুলো পর্যায়ক্রমে পূরণ করা হবে।
জানা গেছে, বিএনপি সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চে কাউন্সিল করে। ওই বছরের আগস্টে ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে পদ রয়েছে ১৯টি। তখন থেকেই দুটি পদ শূন্য রয়েছে। ৪ নেতার মৃতু্য, একজনের পদত্যাগ, তিন নেতার অন্তর্ভুক্তির পরেও বর্তমানে পাঁচটি পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে সাজা ও অসুস্থতার কারণে অনেকে সক্রিয় নেই। কেউ নানা আইনি জটিলতার কারণে দেশে আসতে পারছেন না। এখন বৈঠকে ৮ থেকে ১০ জনের বেশি থাকেন না। কমিটিতে থাকলেও বার্ধক্য, অসুস্থতাসহ নানা কারণে কয়েকজন নেতাকে কখনো বৈঠকে পাওয়া যায় না। সঙ্গত কারণে নীতিনির্ধারণী ফেরামে নতুন নেতার অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা দল প্রচন্ডভাবে অনুভব করছে।

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ