৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৩ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে

spot_img

প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে কিংবা স্থায়ী বসবাসের উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় আসা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। প্রায় দুই কোটি মানুষের এই শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। প্রতিদিনই উন্নত জীবনের আশায়, লেখাপড়া, চাকরি, চিকিৎসাসহ নানা কারণে শহরে আসতে হয় গ্রামের অধিবাসীদের। বিগত বছরগুলোতে শহরমুখী হওয়া মানুষের সংখ্যা হু হু করে বাড়লেও তা হঠাৎ করেই থমকে গেছে গত বছর। বরঞ্চ ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখী হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পক্ষ থেকে গত মার্চ মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩ প্রতিবেদনে দেখা যায়, শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দুই বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০২১ সালে প্রতি হাজারের মধ্যে ৫.৯ জন শহর থেকে গ্রামে গিয়েছিলেন আর ২০২৩ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩.৮ জনে। এই সংখ্যা ২০১৯ সালে ছিল যথাক্রমে ০.৭ জন এবং ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রভাবে তা বেড়ে হয়েছে ৮.৪ জন। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০.৯ জনে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এক বছরের ব্যবধানে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কমেছে হাজারে প্রায় সাত জন। ২০১৯ সালে গ্রাম থেকে শহরে (প্রতি হাজার জনসংখ্যায়) আগমন করেছে ১৫ জন, ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে তা কমে হয়েছে ১২.৭ জন। ২০২১ সালে আবার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮.৪ জন, ২০২২ সালে সেই সংখ্যা আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬.৪ জন। তবে ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯.৬ জনে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা শহরে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়া। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ বেড়েছে, প্রতি বছর বাসাভাড়া বাড়ছে। আয়ের সঙ্গে মাসিক খরচের সামঞ্জস্য কোনোভাবেই রাখা যাচ্ছে না। মূলত এসব কারণে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।

এছাড়াও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে শহরের চেয়ে গ্রামে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করা যায়। তাছাড়া শিক্ষিত বেকার যুবকরা শহরে চাকরির পেছনে না দৌঁড়ে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তারাই আবার গ্রামের মানুষকে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এছাড়া ধীরে ধীরে গ্রাম পরিণত হচ্ছে নগরে। শহরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এখন গ্রামে পৌঁছেছে। গ্রাম থেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে শহরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা যায়। তাছাড়া শহরের জীবনমান এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কঠিন হয়ে গেছে। মূলত এসব কারণে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যাটা কমেছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন কৃষি মজুরি বাড়ছে, কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত উৎপাদনশীল মানুষের আয় বাড়ছে। সেই ঘটনাটা কাউকে কাউকে গ্রামভিত্তিক করে কিনা এটা ভাবার বিষয়। আবার যেহেতু গ্রাম শহর হচ্ছে, উপ-শহরগুলোতে বিভিন্ন সুযোগ তৈরি হচ্ছে- সেই বিষয়গুলো মানুষকে গ্রামে থাকার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করছে কি না সেটাও দেখার বিষয়। ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মানুষ শহর থেকে গ্রামে যাচ্ছে এবং সেখানে থাকছে, কারণ সেখানকার ব্যয় তুলনামূলক সহনীয়।

অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, গ্রামে এখন অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়েছে। শহরের অনেক কিছুই গ্রামে পাওয়া যায়। তাছাড়া শহরের কষ্ট-ভোগান্তির কথা পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে শুনে শহরে আসার আগ্রহ কমেছে। শহরের জীবনযাত্রার মান আগের মতো নেই। অনেক কঠিন হয়ে গেছে। তাই শহরে আসার দিকে মানুষ এখন কম ঝুঁকেছে।

সর্বাধিক জনপ্রিয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ