
মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক সাব্বির হোসেনমানসিক ভারসাম্যহীন যুবক সাব্বির হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাড়িতে ভাত ছিল না তাই অন্যের বাড়ির রান্নাঘরে হাত ঢুকিয়ে ভাত চুরি করতে গিয়েছিলেন এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক। পরে ওই বাড়ির এক নারী চিৎকার করলে এলাকাবাসী তাঁকে আটক করেন। পরে ওই যুবকের হাত বেঁধে মারধর করেন। মারধরের ওই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সোশ্যাল মিডিয়াসহ শহরজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়।
গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে বগুড়া শহরের নিশিন্দারা ইউনিয়নের লাইলিপাড়া গ্রামে। গতকাল রাতের মারধরের ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ আজ মঙ্গলবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
আজকের পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবকের নাম সাব্বির হোসেন (২১)। তিনি বগুড়া শহরের বারপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের শফিকুর রহমানের ছেলে। পেশায় কাঠমিস্ত্রি।
পুলিশ বলছে, মারধরের শিকার সাব্বির মানসিক ভারসাম্যহীন। সোমবার রাতে নিশিন্দারার লাইলিপাড়া গ্রামের এক বাড়ির রান্নাঘরে হাত দিয়ে তিনি ভাত চুরির চেষ্টা করেন। এই অভিযোগে স্থানীয়রা তাঁকে আটক করে মারধর করেছেন। বিষয়টি নজরে আসার পর থেকে জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে।
স্থানীয়রা বলছেন, সোমবার রাতে নিশিন্দারা ইউনিয়নের লাইলিপাড়া গ্রামের মৃত আবু ইউসুফের বাড়ির দোতলার রান্নাঘরে হাত ঢুকিয়ে দেন সাব্বির। তা দেখে ওই বাড়ির এক নারী চিৎকার দেন। চিৎকার শুনে গ্রামবাসী সাব্বিরকে ধাওয়া করে আটক করেন। পরে তাঁর হাত বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ সময় কেউ ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করলে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।
ওই বাড়ির এক নারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই রান্নাঘর থেকে ভাত ও অন্যান্য সব খাবার চুরির ঘটনা ঘটছিল। সোমবার রাতে রান্নাঘরে একজনের হাত দেখতে পেয়ে আমি চিৎকার দেই। পরে গ্রামের লোকেরা তাকে আটক করে একটু মারধর করেছে। সে পাশের এলাকার হওয়ায় পুলিশে না দিয়ে ছেড়েও দেওয়া হয়। তাকে মাদকাসক্ত হিসেবে চিনি। এর আগে সে এলাকায় চুরি করতে এসে ধরা পড়েছে। তবে কে বা কারা ভিডিও করেছে আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাব্বিরের নানি মরিয়ম বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওর (সাব্বিরের) বাবা-মা আলাদা থাকে। ছোট থেকেই সাব্বির আমাদের কাছেই বড় হইছে। গতরাতে বাড়িতে ভাত ছিল না, শুনছি ভাত চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ছে। আমরা গরিব মানুষ, কোনো দিন বাড়িতে ভাত থাকে, আবার কোনো দিন থাকে না।’
মারধরের শিকার সাব্বির চুরির অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘খুব খিদা লাগছিল। ভাত খাওয়ার জন্য ওই বাড়ির রান্নাঘরে হাত দিছিলাম। পরে অনেক মানুষ আমারে বাইন্দা মারছে। প্রায় আধঘণ্টা ধরে মারছে। আমিই ভুল করছি, আমার কোনো অভিযোগ নাই।’
এদিকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ওই এলাকার আবুল, রাজন ও সাব্বির ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। তাঁদের মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) শরাফত ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মারধরের ভিডিও নজরে এসেছে। সাব্বির কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। কাউকে এভাবে মারধর করা দুঃখজনক। জড়িতদের আটকে অভিযান চলছে।’